• ঢাকা বুধবার
    ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের মধ্যেই হামাসের নতুন প্রস্তাব

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম

ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের মধ্যেই হামাসের নতুন প্রস্তাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

একদিকে গাজাজুড়ে চলছে ইসরাইলের তীব্র বিমান হামলা, অন্যদিকে কায়রোয় আলোচনার টেবিলে বসেছে হামাসের প্রতিনিধিদল। এই বিপরীত দৃশ্য আজ ফিলিস্তিন সংকটের বিভাজনরেখা টেনে দিয়েছে আরও স্পষ্টভাবে।

ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, মঙ্গলবার কায়রো পৌঁছেছে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুক্তিকামী সংগঠনটির প্রধান মুখপাত্র ও আলোচক খলিল আল-হাইয়া।

হামাসের দাবি, তারা ‘নতুন কিছু ধারণা’ নিয়ে এসেছেন যুদ্ধবিরতি কার্যকরের জন্য।

এদিকে কায়রোতে এই আলোচনা এমন এক সময় হচ্ছে, যখন ইসরাইলি বাহিনীর সর্বশেষ বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়া স্কুলে বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইল। যাদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে, যে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে। একই সঙ্গে হামলায় ধ্বংস হয়েছে একাধিক বাড়িঘর ও স্থানীয় অবকাঠামো।

আলোচনার কূটনীতি বনাম আক্রমণের গণনীতিকরণ

এদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি বলেছেন, গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে দোহা এখনো মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

হামাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘মিশরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে, যাতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খোলা যায়’।

তবে এই আলোচনার প্রেক্ষাপট খুবই বিস্তৃত ও উত্তপ্ত। কারণ হামাস কিছুদিন আগেই ইসরাইলের এক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। ওই প্রস্তাবে ১০ জন জীবিত জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ৪৫ দিনের অস্ত্রবিরতির কথা বলা হয়।

এদিকে ইসরাইলে নতুন নিয়োগ পাওয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি সোমবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘যখন জিম্মিরা মুক্তি পাবে, তখনই মানবিক সহায়তা প্রবাহ শুরু হবে। তবে তা হবে নিয়ন্ত্রিত ও নিরপেক্ষ’।

সেই সঙ্গে, হামাস এই সহায়তার অপব্যবহার করছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই দাবি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে ফিলিস্তিনি সংগঠনটি।

ইসরাইলি বিমান হামলায় মৃত্যু ও ধ্বংস

এদিকে গাজার সিভিল ডিফেন্স জানায়, মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া বিমান হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। শুধু খান ইউনিসের একটি বাড়িতেই শহিদ হয়েছেন ৯ জন। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন অন্তত ৬ জন।

উত্তরের জাবালিয়ার পৌরসভার কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। সেখানে ধ্বংস হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ও যানবাহন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, উপত্যকাজুড়ে গত ১৮ মাস ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫১,২৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১৬,৯৯১ জন আহত হয়েছেন।

তবে গাজা সরকারি মিডিয়া অফিস তাদের মৃতের সংখ্যা ৬২,০০০-এরও বেশি বলে আপডেট করেছে। জানিয়েছে যে, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

মানবিক সহায়তাকে ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার

জাতিসংঘের UNRWA প্রধান ফিলিপ লাজারিনি মঙ্গলবার এক্স-এ বলেন, ‘গাজা আজ চরম হতাশার ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়ছে। মানবিক সহায়তা ব্যবহৃত হচ্ছে এক রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে’।

গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দু’মাসের যুদ্ধবিরতির পর ১৮ মার্চ ফের সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল। কারণ উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের শর্ত নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। হামাস যেখানে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানায়, সেখানে ইসরাইল কেবল প্রথম ধাপটাই দীর্ঘায়িত করতে চায়।

যুদ্ধ, আলোচনা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

এ মুহূর্তে গাজা এক চরম দ্বন্দ্বের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে। একদিকে সামরিক আগ্রাসনের বাস্তবতা, অন্যদিকে কায়রোয় শান্তি আলোচনার প্রতিশ্রুতি। বাস্তবতা হলো— যতক্ষণ না উভয়পক্ষ একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে পৌঁছায়, ততক্ষণ এই দুঃস্বপ্ন থামবে না।

গাজার আকাশে যতক্ষণ বিস্ফোরণের শব্দ বেজে চলে, ততক্ষণ কূটনৈতিক সংলাপও যেন কেবল কাগজের ওপর রয়ে যায়—জীবনের কাছে যার অর্থ কেবলই শূন্য।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ