• ঢাকা সোমবার
    ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রঘাঁটি: বৈশ্বিক নিরাপত্তার নতুন হুমকি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ১০:১১ এএম

সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রঘাঁটি: বৈশ্বিক নিরাপত্তার নতুন হুমকি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সিরিয়ায় ১০০টির বেশি রাসায়নিক অস্ত্রঘাঁটির অস্তিত্ব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এসব স্থানের অনেকগুলোই এতটাই গোপন ও দুর্গম এলাকায় অবস্থিত যে সেগুলো স্যাটেলাইট নজরদারির মাধ্যমেও শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘাঁটিগুলোর বেশিরভাগই স্নায়ু গ্যাস সারিন, ক্লোরিন এবং মাস্টার্ড গ্যাসের গবেষণা, উৎপাদন ও সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হতো। অনেক ঘাঁটি পাহাড়ি গুহা বা মানবসাধ্য অপ্রবেশযোগ্য এলাকায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে, যার ফলে সেগুলোর অবস্থান নির্ধারণ ও ধ্বংস করা জটিল হয়ে উঠছে।

সম্প্রতি রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওপিসিডব্লিউ-এর একটি তদন্তকারী দল সিরিয়া সফর করে। তারা সেখানকার কিছু পুরনো উৎপাদন ও সংরক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করে, যেগুলোর অনেকগুলোই আগেই লুটপাট কিংবা বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

এই পরিদর্শন কার্যক্রমকে এক বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ বিগত বছরগুলোতে বাশার আল-আসাদের প্রশাসন ওপিসিডব্লিউকে বারবার বাধা দিয়ে এসেছে এবং পরিদর্শকদের কার্যক্রম সীমিত করেছিল। এবার ওপিসিডব্লিউ দলকে পূর্ণ নিরাপত্তা এবং অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে, যা পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অরক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত স্থানে রাসায়নিক অস্ত্রের উপস্থিতি কেবল সিরিয়া নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি। কারণ, চরমপন্থি বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে এ ধরনের অস্ত্র চলে গেলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব অস্ত্রঘাঁটিতে নিম্নলিখিত মারাত্মক রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে:

সারিন গ্যাস: এক ধরনের স্নায়ু বিকলকারী রাসায়নিক, যা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রাণঘাতী হতে পারে।

ক্লোরিন গ্যাস: যা শ্বাসযন্ত্রকে অকার্যকর করে এবং মারাত্মক দগ্ধ সৃষ্টি করে।

মাস্টার্ড গ্যাস: চোখ ও ত্বকে জ্বালাপোড়া তৈরি করে, এবং ফুসফুসে তরল পদার্থ জমিয়ে শ্বাসরোধ করে।

চলতি বছরের মার্চ মাসে দ্য হেগে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সফরে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ হাসান আল-শাইবানি আশ্বাস দিয়েছেন, আসাদ যুগের অবশিষ্ট সব রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হবে এবং সিরিয়া আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকবে।

বর্তমানে ওপিসিডব্লিউ সদস্য দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং স্বাধীন গবেষকদের তথ্যের ভিত্তিতে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রঘাঁটির সংখ্যা ১০০টিরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওপিসিডব্লিউ এই সকল সন্দেহজনক স্থানে পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে চায়, যাতে অস্ত্রের অবস্থা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

সিরিয়ার নতুন সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো—এই মারাত্মক অস্ত্রসম্ভারকে নিরাপদভাবে ধ্বংস করা এবং তা কোনোভাবে চরমপন্থিদের হাতে না পৌঁছাতে দেওয়া। এই প্রক্রিয়ার সফলতা কেবল সিরিয়ার নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ