আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কয়েকদিন পশ্চিম ইউরোপে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে এ অঞ্চলের দেশ জার্মানি, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ বন্যায় অন্তত ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৩০০ মানুষ। শুক্রবার (১৬ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। এদিন ইউরোপের ওই অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃতদের বেশিরভাগই জার্মানির নাগরিক। বেলজিয়ামে ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে ডয়চে ভেলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জার্মানির রাইনল্যান্ড-পালাটিনাটে এবং নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়া প্রদেশ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাড নয়নার-আরভেইলার জেলায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ জনের খোঁজ মিলছে না। সেখানে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে পড়েছে।
প্রশাসন ধারণা করছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যয়ের কারণে এসব বাসিন্দার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নাগরিকের জন্য জরুরি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জার্মানিতে বন্যায় সর্বশেষ ২০০২ সালে ২১ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরপর গত কয়েক বছরে এত বেশি মৃত্যু হয়নি। এবারের বন্যায় মৃত্যু সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতিতে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল। তিনি বলেন, 'আমি বিস্মিত যে এই দুর্যোগ কবলিত এলাকায় এত বেশি সংখ্যক নাগরিককে দুর্দশা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মৃত ও নিখোঁজদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি।'
এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা তিনি দিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন ল্যাশেট এই চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়া ফিরে ফিরে আসার ঘটনা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে একটি একক ঘটনাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলাটা একটু জটিল।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জার্মানিতে কয়েকশ সেনা সদস্য এবং আড়াই হাজার ত্রাণকর্মী উদ্ধার কার্যক্রমে পুলিশকে সাহায্য করছে। বৃষ্টি-বন্যায় সৃষ্ট ভূমিধস এবং গাছ উপড়ে বন্ধ রাস্তা সচল করতে ট্যাংক নিয়োজিত করা হয়েছে। যারা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের উদ্ধার করতে ব্যবহার করা হচ্ছে হেলিকপ্টার। কমপক্ষে দুই লাখ বাড়িঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে ফেসড্রে নদী উপচে বন্যায় বেলজিয়ামের পূর্বাঞ্চলীয় শহর পেপিনস্টারে ১০টি ঘর ধসে পড়েছে। শহরের এক হাজার বাড়িঘর থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভারী বর্ষণে বেলজিয়ামে গণপরিবহন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। জার্মানি অভিমুখী উচ্চ-গতির থালিস ট্রেন সার্ভিস বাতিল করা হয়েছে। প্লাবনের আশঙ্কায় ময়সে নদীতে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ, নৌ-চলাচল স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
ইউরোপের এই অঞ্চলের আরেক দেশ নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন নদীতে পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় দক্ষিণের লিমবার্গ প্রদেশে অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার বেশকিছু বয়স্ক সেবাকেন্দ্র খালি করে ফেলা হয়েছে। মাসট্রিখট শহরের ১০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে গত ২৪ ঘণ্টায় অপ্রত্যাশিত পরিমাণে ভারি বর্ষণ হয়েছে। নিম্নচাপজনিত আবহাওয়া ফ্রান্সের পশ্চিমে, বেলজিয়ামে ও নেদারল্যান্ডে দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাতের প্রভাবকের কাজ করছে।
সম্রাট/নির্জন\তরিকুল
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন