• ঢাকা বুধবার
    ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট

আমেরিকাকে স্বর্ণযুগে নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ১১:২২ পিএম

আমেরিকাকে স্বর্ণযুগে নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করছেন রিপাবলিকান ডেনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকাকে নতুন করে স্বর্ণযুগে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সোমবারই তিনি জো বাইডেনের শাসনামলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ বাতিল করেছেন। 

২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় জড়িত ১৫০০ জনকে ক্ষমা করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আদেশে স্বাক্ষরের পাশাপাশি তিনি মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, পানামা খাল ফেরত, বিদেশি পণ্যের আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধিসহ কয়েক ডজন নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছেন। 

এছাড়া বাইডেনের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সহস্রাধিক কর্মকর্তাকে তিনি বরখাস্ত করার পরিকল্পনা করেছেন। ইতোমধ্যে ট্রাম্প মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চারজনকে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। খবর রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, এপি, এএফপির।

আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের (এবিএ) তথ্যানুযায়ী, দুই ধরনের নির্বাহী কর্ম রয়েছে-একটি নির্বাহী আদেশ আর অন্যটি হলো ঘোষণা। নির্বাহী আদেশ হচ্ছে আইনত পালনে বাধ্যতামূলক ফেডারেল সরকারের কাছে লিখিত আদেশ। এর জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। 

আর ঘোষণা সাধারণত আইনত মানা বাধ্যতামূলক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ প্রেসিডেন্টকে নির্বাহী আদেশ জারি করার ক্ষমতা দিয়েছে। দেশের প্রধান নির্বাহী হিসাবে নতুন প্রেসিডেন্ট তার আগের প্রেসিডেন্টের নির্দেশ বাতিল করে নতুন নির্দেশ জারি করতে পারেন। 

দাঙ্গায় জড়িত ১৫০০ জনকে ক্ষমা: ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে ঢুকে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেছিলেন ট্রাম্প সমর্থকরা। বাইডেনের আমলে তাদের বিচার শুরু হয়। বেশ কয়েকজন শাস্তি পায়। ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই প্রথমেই নির্বাহী আদেশ জারি করে বলেছেন, তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হলো। তাদের প্রতি জাতীয় পর্যায়ে অন্যায় করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে। যারা জেলে আছেন, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে। সরকারি হিসাবে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে ক্যাপিটল দাঙ্গার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

ট্রাম্প বলেন, তারা আজ রাতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়া ঘুরে বেড়াবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এছাড়া এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ আসামির সাজাও কমানোর কথা জানান ট্রাম্প। ২০২১ সালে ট্রাম্পের এক জালাময়ী বক্তব্যের পরই তার দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ক্যাপিটল হিলে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। 

ওই সময় নির্বাচনের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্য বৈঠকে বসা আইনপ্রণেতা ও ট্রাম্পের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে আত্মরক্ষার জন্য পালাতে বাধ্য করেন। 

অভিবাসন ইস্যুতে জাতীয় জরুরি অবস্থা: যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী প্রবেশ ঠেকাতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি অভিবাসন ইস্যুতে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং সেনাবাহিনীকে সীমান্ত সুরক্ষায় সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া শরণার্থী গ্রহণে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বিদেশি বংশোদ্ভূত দম্পতির শিশুদের নাগরিকত্ব সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ বা ‘মেক্সিকোতেই অবস্থান করো’ কর্মসূচি পুনরায় চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আগ্রহী মেক্সিকো ছাড়া অন্য দেশের অভিবাসীদের মামলা মার্কিন আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মেক্সিকোতে থাকতে বাধ্য করা হয়। 

মার্কিন সীমান্ত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বাইডেনের চালু করা কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) ওয়ান এন্ট্রি প্রোগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে বছরে কয়েক লাখ অভিবাসী একটি অ্যাপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে প্রবেশ করতে পারত।

জন্মগতভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল : আরেক নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগতভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল করে দিয়েছেন ট্রাম্প। ১৫০ বছর ধরে মার্কিন ভ‚খণ্ডে জন্ম নেওয়া শিশুরা ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব’ পেয়ে আসছিল। তবে সেই অধিকারকে বাতিল করে এবার নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন ট্রাম্প। 

২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে। ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে যদি অবৈধ অভিবাসীর সন্তান জন্ম নেয়, তাহলে সেই শিশুরা আর মার্কিন নাগরিক হবেন না। এদিকে জন্ম নেওয়া শিশুর মা-বাবা যদি বৈধভাবেই আমেরিকায় গিয়ে থাকেন; কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো একজন সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাহলেও সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। 

এছাড়া কেউ যদি স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা বা টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন, তাহলেও সেই শিশুও আর মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। ট্রাম্পের এই বিতর্কিত উদ্যোগ তাৎক্ষণিকভাবে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, এ সিদ্ধান্ত চতুর্দশ সংশোধনীর পর থেকে ১৫০ বছরেরও বেশি সময় প্রচলিত সাংবিধানিক ব্যাখ্যার পরিপন্থি।

বাইডেন আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মীকে ছাঁটাই: বাইডেনের আমলে নিয়োগ পাওয়া হাজারের বেশি কর্মীকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছেন ট্রাম্প। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি চার ব্যক্তিকে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। 

ট্রুথ সোশ্যালের এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, আমাদের ভিশন হচ্ছে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’। আগের প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা আমাদের ভিশন ধারণ করতে পারবেন না, তাদের চিহ্নিত করে অপসারণে আমার প্রেসিডেনশিয়াল পার্সোনেল অফিস কাজ করছে।

এছাড়া সরকারি কর্মীদের সপ্তাহে পাঁচদিন অফিসে আসার কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদের চাকরির সুরক্ষা হ্রাস করার পদক্ষেপও তিনি নিয়েছেন। সরকারি কর্মচারীদের নিয়মিত অফিসে যাওয়া, বাড়ি থেকে কাজের সুবিধা বন্ধ করা এবং তাদের চাকরির সুরক্ষা হ্রাস করাকে ‘শিডিউল এফ’ বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। 

ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। 

তিনি বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ, এ সংস্থা করোনা মহামারি এবং আরও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় এতদিন অন্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র ‘অন্যায্য পরিমাণে’ অর্থ প্রদান করেছে। ট্রাম্পের এ নির্দেশনার ফলে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে ১২ মাস সময় পাবে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আর্থিক বরাদ্দ বন্ধ করতে পারবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মোট তহবিলের ১৮ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে। 

বৈদেশিক সহায়তা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করলেন : ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা শিল্প ও আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা প্রায়ই আমেরিকান স্বার্থ এবং মূল্যবোধের বিরোধিতা করে। এ ধরনের কর্মসূচি বিদেশে এমন সব ধারণার প্রচার করে; যা বিশ্বশান্তিকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীল সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বিরোধপূর্ণ। 

প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্যগুলোর সঙ্গে একেবারে মিল না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বৈদেশিক সহায়তা করবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বাজেটের প্রায় এক শতাংশই যায় বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি তহবিলে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে এই বিদেশি সহায়তার সমালোচনা করছেন। 

প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসা। বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল। সেটা থেকে সরে এলেন ট্রাম্প। 

তবে চুক্তির নিয়ম অনুসারে বর্তমান কোনো সদস্য দেশ জাতিসংঘের কাছে আনুষ্ঠানিক নোটিশ পাঠানোর পর এক বছরের মতো সময় লাগে প্রক্রিয়া শেষ করতে। এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ। আমরা ড্রিলিংয়ের কাজ অনেকটাই বাড়াব। নির্বাহী আদেশ জারির পর তিনি বলেন, এখন আমরা ড্রিল করব। ড্রিল বেবি ড্রিল।

আরেকটি নির্বাহী আদেশে মেক্সিকোর মাদক পাচারকারী সংগঠনগুলোকে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দেওয়া হয়েছে। টিকটক নিয়ে আরেকটি আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। সেখানে বলা হয়েছে, টিকটক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত এখনই কার্যকর করা হবে না। 

প্রশাসনিক নির্দেশে বলা হয়েছে, টিকটক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ৭৫ দিন পিছিয়ে দেওয়া হলো। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ‘টিকটক বন্ধ করা হবে নাকি বিক্রি করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাকে একটু সময় দিন।’

ট্রাম্প জাতীয় পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সই করেছেন। আরেকটি নির্দেশে বলা হয়েছে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম নয়, সরকারি কর্মীদের সবাইকে অফিসে এসে কাজ করতে হবে।

সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটলে শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি যান ক্যাপিটল ওয়ান স্টেডিয়ামে। সেখানে হাজার হাজার সমর্থকের সামনে বেশকিছু নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেন তিনি। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-বাইডেন আমলের ৭৮টি আদেশ বাতিল করা; যার মধ্যে আছে কিউবাকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থলের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবৈধ দখলদার ইসরাইলিদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ