আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পরিবার, সমাজ কিংবা একেবারে লোকচক্ষুর আড়ালে অনেকেই চলে যান। সব ছেড়ে উধাও হয়ে যান, যাতে কেউ তাদের খুঁজে না পায়। অনেক মানুষ এরকম নিজের জীবন থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বলা যেতে পারে স্বেচ্ছায় 'গুম' হয়ে যাওয়া। এমন স্বেচ্ছায় 'গুম' হতে চাইলে পৃথিবীতে রয়েছে সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানও।
বুধবার (১৪ জুলাই) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাপানে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো মানুষকে সমাজ থেকে পালিয়ে থাকতে সাহায্য করে।
যারা সমাজ থেকে পালাতে চান জাপানে তাদের অভিহিত করা হয় 'জুহাতসু' হিসেবে। এই জাপানি শব্দের অর্থ বাষ্পীভবন বা হাওয়া হয়ে যাওয়া। যেসব লোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে লুকোতে চান, তাদের বোঝাতেও এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ৪২ বছর বয়সী সুগিমোতো (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, 'মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে আমি অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়ি। এরপর ছোট্ট একটি সুটকেস নিয়ে আমি উধাও হয়ে যাই। এক ধরনের পালিয়ে যাওয়াও বলতে পারেন।'
তিনি বিবিসিকে জানান, ছোট্ট একটি শহরে তিনি ছিলেন। পরিবারের কারণে সেখানে সবাই তাকে চিনতো। কারণ তাদের ব্যবসা স্থানীয় লোকজনের কাছে বেশ পরিচিত ছিল। পরিবারটি আশা করছিল যে সুগিমোতো এ ব্যবসার হাল ধরবেন। কিন্তু এই দায়িত্ব নিয়ে তিনি এমন চাপের মধ্যে পড়েন, তার মধ্যে মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। তিনি খুব দ্রুত চিরদিনের জন্য ওই শহর ছেড়ে চলে যান। কোথায় যাচ্ছেন সে কথাও কাউকে বলেননি।
সুগিমোতো এভাবে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। পরিশোধ করার মতো নয় এমন ঋণ। এ ছাড়াও রয়েছে প্রেমহীন বিবাহ। আর তারা তখন এমন কিছু কোম্পানির দ্বারস্থ হন, যারা তাদের উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে।
এ ধরনের কাজকে বলা হয়, 'রাতে সরে যাওয়া'র সার্ভিস। এরমধ্য দিয়ে দেশটিতে 'জুহাতসু' হয়ে যাওয়ার গোপন প্রক্রিয়াকেই অনুমোদন করা হয়। যেসব লোকজন উধাও হতে চান, তাদের গোপনে জীবন থেকে সরে যেতে সাহায্য করে এসব কোম্পানি। এমনকি গোপন স্থানে তাদের থাকারও ব্যবস্থা করে দেয়।
জাপানের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমেছিল ৯০-এর দশকে। তখন পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে এ রকম একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন শো হাতোরি।
তিনি বলেন, 'স্বেচ্ছায় গুম হওয়ার পেছনে খারাপ কিছু কারণও থাকে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া, চাকরি হারানো অথবা কারও কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া।'
পালাতে সাহায্যকারী এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা বলেন, 'মানুষ যাতে আরেকটি দ্বিতীয় জীবন শুরু করতে পারে সে ব্যাপারে সাহায্য করার জন্যই আমরা এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছি।'
প্রতিবেদনে জানানো হয়, এভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমাজবিজ্ঞানী হিরোকি নাকামোরি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন।
তিনি বলেন, 'ষাটের দশকে যারা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেন তাদের ব্যাপারেই প্রথম জুহাতসু শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। জাপানে বিবাহবিচ্ছেদের হার খুব কম ছিল, এখনও কম। ফলে অনেকেই ডিভোর্সের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে একদিন হঠাৎ করেই তাদের স্বামী বা স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যায়।'
নাকামোরি বলেন, 'জাপানে উধাও হয়ে যাওয়া খুব সহজ। দেশটিতে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়। নিখোঁজ ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় না দিয়েও মুক্তভাবে এটিএম থেকে অর্থ তুলতে পারেন।'
সম্রাট/সবুজ/নির্জন
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন