প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১০:৩২ এএম
দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে একসময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে এ সম্পর্ক এখন টানাপোড়েনের মুখে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সময়মতো উদ্যোগ না নিলে দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়তে পারে।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের চাপের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়েন এবং পরে ভারতে আশ্রয় নেন। ভারতের দীর্ঘদিনের সমর্থনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বিশ্লেষনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শাফি মো. মোস্তফা মনে করেন, `ভারতের উচিত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখানো এবং সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা।` তিনি আরও বলেন, `বাংলাদেশের উচিত সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধান করে বাইরের চাপের হাত থেকে মুক্ত থাকা।`
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অধিকার নিয়ে ভারতের উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে দুদেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় এক হিন্দু পুরোহিত জামিন না পাওয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এর ফলে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়।
মাহফুজ আলম নামের একজন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ভারতের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করে পরিস্থিতি আরও জটিল করেন। তিনি ভারতের কিছু অংশ দখলের হুমকি দিয়ে পোস্ট দেন, যা পরে মুছে ফেলা হয়।
ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা কার্যক্রম সীমিত করেছে। এর ফলে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া অনেক বাংলাদেশি বিপাকে পড়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমেও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যুতে সমালোচনা বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পিস ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড বলেন, `বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার অভাব ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনা প্রয়োজন।`
কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মতো বিভাজনের পথে যেতে পারে। দিল্লিভিত্তিক সাংবাদিক ভারত ভূষণ বলেন, `ভারতের উসকানিমূলক মন্তব্য এবং বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার অভাব দুই দেশের মধ্যে বিভক্তি বাড়াচ্ছে। আজ বাংলাদেশের ন্যায় ভারতের খুব কম বন্ধুই বাকি আছে।`
তবে দিল্লির ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের গবেষক পবন চৌরাসিয়া এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, `বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়।`
তিনি আরও বলেন, `বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংবিধান পরিবর্তন এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের মতো বিষয়গুলো আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে নির্ধারিত হবে। এটি ভারতের জন্য অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের সময়।`
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্র সম্প্রতি ঢাকা সফর করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যদিও সংখ্যালঘু অধিকার, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে, তবে এ আলোচনা দুই দেশের সম্পর্কে আশার আলো দেখাচ্ছে।