প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১২:১২ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিস্তর প্রভাব দেখা যায় বিশ্বজুড়ে। কে বসবেন মসনদে সে দিকে তাকিয়ে থাকে ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলো। ট্রাম্প বা কমলা যিনিই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন না কেন, তার সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে এর ওপর নির্ভর করে সেসব দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।
গাজা যুদ্ধ, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা চীন-তাইওয়ান সংঘাত, এসব স্থানে অন্যতম মুখ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ ও অন্যতম প্রধান সামরিক শক্তি হিসেবে পরিচিত এই দেশটি বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশকে সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে প্রতি চার বছর পর পর তাকিয়ে থাকে এই সব দেশ, তথা গোটা বিশ্ব। অনেক দেশ মার্কিন নির্বাচনকে নিজ দেশের নির্বাচনের মতই গুরুত্ব দিয়ে দেখে থাকে। কারণ বিশ্বে নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট বদলের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বেশিরভাগ দেশই।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেন প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চায়, তবে দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য হুমকি বলে মনে করেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল কানাডা ও মেক্সিকোর ওপরও প্রভাব ফেলে।
ট্রাম্প নির্বাচিত হলে মার্কিন প্রশাসনের এই নীতি অনেকটাই বদলে যেতে পারে। কানাডা সঙ্গে কঠোর নীতি গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে মেক্সিকোর ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করা হবে বলেও ধারণা করা হয়।
বর্তমানে চীনে বেড়ে চলেছে অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব ও বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য এক বড় সুযোগ।
এদিকে জাপানের সঙ্গে নিরাপত্তা জোট শক্তিশালী করছে মার্কিন সরকার। দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় করে থাকে। এই চাপ কমানোর জন্যে ট্রাম্প নির্বাচিত হলে দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রতিরক্ষা খরচ বাড়ানোর চাপ দেবেন বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে সামরিক সহযোগিতা জোরদার করবেন কমলা। তবে দুজনেই উত্তর কোরিয়ার পরমাণু হুমকি মোকাবিলায় সতর্কতার প্রতি গুরুত্ব দেবেন।
ট্রাম্প বিজয়ী হলে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হতে পারে বলে ধারণা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের। থাকবে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কাও। কিন্তু হ্যারিস চাইবেন সম্পর্ক উন্নত করতে। বিশেষ করে ন্যাটোতে মার্কিন তৎপরতা কমলে পুরো ইউরোপেই নিরাপত্তা সংকটে পড়বে বলে মনে করে ডেমোক্র্যাটিক শিবির।
অন্যদিকে নির্বাচনের ফলাফল ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থানকে প্রভাবিত করবে। কমলা হ্যারিস ইউক্রেনের প্রতি নিশ্চিতভাবেই সমর্থন বাড়াবেন, তবে ট্রাম্পের নীতি কী হবে তা অনিশ্চিত। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কও নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর গাজা যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। ইরানকে নিয়ে ট্রাম্প ও কমলার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা মনে করেন, মার্কিন নেতৃত্বে যিনিই আসুন, তাকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত মুসলিম বিশ্ব। এ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়তে হতে পারে নতুন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক গত চার বছরে অনেকটা দৃঢ় হয়েছে বটে, তবে সমঝোতার ক্ষেগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে অগ্রগতির পরিমাণ আশানুরূপ নয়। নতুন প্রশাসনকে এই দিকে মনোযোগ দিতে হবে, সেই সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ এশিয়াকে স্থিতিশীল করতে দুই দেশের সরকারকেই বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে বলেও মনে করেন তারা।