প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ১০:০৮ পিএম
ফিলিস্তিনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে বিমান থেকে ফেলা ত্রাণের বস্তার আঘাতে সামি আয়াদ নামের তিন বছর বয়সি এক ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।
শনিবার এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত শিশু সামির দাদা সিএনএনকে বলেন, আমাদের পরিবার সকালের নাস্তা খাচ্ছিল, তখন হুট করে বিমান থেকে ত্রাণের একটি বস্তা পড়ে।
তিনি আরও বলেন, পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য তাঁবুর ভিতরে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বস্তাটি হুট করে পড়ে যাওয়ায় সামিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
সামির দুই আত্মীয়রও পায়ে ও মুখে আঘাত লেগেছে বলে জানান তার দাদা। তিনি বলেন, আমি সামির সঙ্গে এখানে বসেছিলাম। যে মুহূর্তে আমি উঠে যাই তখনই বস্তাটি ওর ওপর পড়ে। সামি আর আমার মধ্যে মাত্র এক সেকেন্ডের দূরত্ব ছিল। পরক্ষণেই আমি ওকে কোলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম।
সামির দাদা হতাশার সুরে বলেন, আমাদের এখানে কোনও হাসপাতাল নেই। আমি পাগলের মতো দৌড় দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি ওকে বাঁচাতে পারিনি। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।
ঘটনার পর সিএনএনের ফুটেজে দেখা যায়, সামির ওপর বস্তা পড়ার পর তার দেহে রক্ত লেগে আছে। সামির দাদা ক্ষুদ্ধ হয়ে সিএনএনকে বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা চাই মর্যাদা। আরবদের কাছ থেকে আমরা এখনও পর্যন্ত যতটা অপমানিত হয়েছি তা যথেষ্ট। কেবল ইসরাইল নয়, যারা আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল না, তারা আমাদের সন্তানদের দিকে তাকান, আমাদের নারী, আমাদের বয়স্কদের দিকে তাকান।
সামির চাচা মোহাম্মদ আয়াদ সিএনএনকে বলেন, আমাদের জীবন এখন অনিশ্চিত। অপমান, মৃত্যু, আতঙ্ক নিয়েই দিন পার করছি। রাতে ঘুম ভাঙবে কিনা জানি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষ, আকাশ থেকে খাবার ফেলবে কেন? আমরা তো প্রাণী নই।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়ন্ত্রক ইসরাইলি সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) খান ইউনিসে ৮১টি খাবারের বস্তা ফেলেছিল। ইসরাইলের কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাক্টিভিটিস ইন দ্য টেরিটরিজ (সিওজিএটি) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ১০ হাজারেরও বেশি ত্রাণের বস্তা বিমান থেকে ফেলা হয়েছে।
‘মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টাইনস’ নামের একটি এনজিও-র গাজার পরিচালক ফিকর শালতুত অভিযোগ করেছেন, গাজা জুড়ে অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরাইল সরকার।
সোমবার সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে শালতুত বলেন, গত এক বছর ধরে চলা ইসরাইলি বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞের মধ্যে তিন বছর বয়সি শিশুটি যেখানে প্রতি মুহুর্তে বেঁচে থাকার লড়াই করছিল, সেখানে বিমান থেকে পড়া একটা ত্রাণের বস্তায় চাপা পড়ে নিমিষেই মারা যাওয়া আসলেই খুবই মর্মান্তিক।