প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ১০:৩০ এএম
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ বাহিনীর মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানাতে গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের প্রতি আরজি জানিয়েছে লেবানন সরকার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাতে দেশটির রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় ২২ জন নিহত হয়েছে। এমন হামলার পর বৈরুতের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার পর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া হতাহতদের খুঁজতে গতকালও তল্লাশি চালান উদ্ধারকর্মীরা।
এদিকে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোনো সতর্কতা ছাড়াই আচমকা হামলা চালায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১১৭ জন আহত হয়েছে। ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত শুরুর পর এটিই বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বৈরুতের অনেক বাসিন্দা বলছে, তারা বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পেয়েছে।
গতকাল বৈরুতে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতাই বলেছেন, মধ্য বৈরুতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহতরা সবাই বেসামরিক নাগরিক। এমন হত্যাযজ্ঞ একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘মানবতা আজ কোথায়? আমরা কোন বাস্তবতায় বাস করছি?’ টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে একটি প্রস্তাব জারি করতে বলবে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে বৈরুতের রাস এল নাবা ও আল নুয়েইরি এলাকায় গত বৃহস্পতিবার বিমান হামলার পর লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চোখে পড়ে।
দুটি আবাসিক ভবনে আগুনের শিখা ও ধোঁয়া দেখা গেছে। দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী গতকাল নিশ্চিত করেছে যে নাকোরায় তাদের দপ্তর লক্ষ্য করে ফের বোমার আঘাত হানা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো হামলার শিকার হলো দপ্তরটি। দুটি বিস্ফোরণে লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনীর দুজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার জন্য বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।
তিনি লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার নিন্দা জানান। লেবাননে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে স্পেনের সেনারাও কাজ করছেন। তবে ইসরায়েলের হামলায় তাঁদের কেউ আঘাত পাননি বলে স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গতকাল নিশ্চিত করে জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক সংঘাত বৃদ্ধির জন্য ইসরায়েলের সমালোচনা করে আসছে স্পেন। এদিকে লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় গতকাল ফ্রান্স প্যারিসে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানায়।
গাজায় হামলায় নিহত ৬১
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা চলছেই। গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় হামলায় অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ২৩১ জন। ইসরায়েলি বাহিনী জাবালিয়া, দেইর আল বালাহসহ গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত ধ্বংসাত্মক হামলা এক বছর পেরিয়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের বেপরোয়া হামলায় এ পর্যন্ত ৪২ হাজার ১২৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ৯৮ হাজার ১১৭ জন। গত মাসের শেষের দিক থেকে ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননে হামলায় নজর দিলেও গাজায় আক্রমণের তীব্রতা হ্রাস পায়নি।
জাতিসংঘের প্রধানকে সমর্থন
ইসরায়েলের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পর ১০০ টিরও বেশি রাষ্ট্র জাতিসংঘের প্রধানকে সমর্থন জানিয়ে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ইসরায়েলের সাম্প্রতিক জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ‘ব্যক্তিত্বহীন’ ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে।
জাতিসংঘের প্রধানের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ১০৫টি রাষ্ট্র চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে। তারা ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণার নিন্দা করেছে। জাতিসংঘের প্রধান গুতেরেসকে ইসরায়েলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। এর পরেই জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলো নিন্দা জানানো শুরু করে।
স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন, ‘এই ধরনের কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের নিয়ম-নীতি বাস্তবায়নের ক্ষমতাকে ক্ষুন্ন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মধ্যস্থতা দ্বন্দ্ব এবং মানবিক সহায়তা প্রদান।’
তারা আরো বলেন, ‘আমরা মহাসচিব ও তার কাজের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন এবং আস্থা নিশ্চিত করছি ... জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আমরা জাতিসংঘের নেতৃত্ব এবং এর মিশনের প্রতি সম্মানের আহ্বান জানাই।’
যৌথ বিবৃতি দিয়েছে চিলি, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা, ইন্দোনেশিয়া, স্পেন, গায়ানা এবং মেক্সিকো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও মহাসচিবের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছে।
১৫-সদস্যের কাউন্সিল একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব বা জাতিসংঘের সঙ্গে জড়িত না হওয়ার যে কোনও সিদ্ধান্ত বিপরীতমুখী, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।’