• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে আক্রমণ

অবিলম্বে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাবে লেবাননের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৪, ০৭:৩৪ পিএম

অবিলম্বে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাবে লেবাননের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, তার সরকার ‘ইউএন রেজ্যুলিউশন ১৭০১’ পূর্ণ বাস্তবায়ন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবুল্লাহর মধ্যকার যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল। 

নাজিব মিকাতী দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে প্রস্তুত বলেও জানান। 

অবিলম্বে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিয়েছে লেবানন সরকার।

এই বিষয়ে হেজবুল্লাহ’র অবস্থান কী, তা জানতে চাওয়া হলে মি. মিকাতি বলেব যে তারা সরকারের অংশ এবং তারাও ‘ইউএন রেজ্যুলিউশন ১৭০১’ বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে।

যদিও মিকাতি কূটনৈতিক সমাধানের কথা বলেছেন। তবে বাস্তবতা হলো এই যে ইসরায়েল কোনোপ্রকার ছাড় না দিয়ে লেবাননের ওপর আক্রমণ চালিয়েই যাচ্ছে।

এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন হলো গতকাল রাতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে আক্রমণ।

লেবাননে ইসরায়েলি হামলা

কোনোপ্রকার আগাম সতর্কতা ছাড়াই স্থানীয় সময় রাত আটটার দিকে বৈরুতের সিটি সেন্টারে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই স্থানটি সবসময় লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকতো।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এতে মোট ২২ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১৭ জন। এবং, এদের সকলেই বেসামরিক নাগরিক।

বৈরুতের দু’টি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় চালানো এই হামলায় জনমনে ক্রমশ আতঙ্ক বাড়ছে। মানুষ মনে করছেন, যেকোনও মুহূর্তে যে কোনও কোথাও হামলা হতে পারে।

বলা হচ্ছে, গত মাসে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বৈরুতের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ইসরায়েলি হামলা ছিল এটি।

উদ্ধারকর্মীরা এখন বৈরুতের শিয়া অধ্যুষিত ছোট এলাকা বাচৌরার ধ্বসস্তূপে খনন কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই অঞ্চলেই ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে।

লেবাননের মিডিয়া আউটলেটগুলো দেশটির নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে যে নিহত হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ’র ঘনিষ্ঠ সহযোগী ওয়াফিক সাফা এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন। সর্বশেষ আঘাত হানা এই হামলার মূল লক্ষ্যবস্তু মূলত তিনিই ছিলেন।

লেবাননে ইসরায়েলি হামলা

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বা হেজবুল্লাহ, কেউই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

লেবাননে হামলা চালানোর বিষয়ে আগাম কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি এবং এ নিয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও কোনও মন্তব্য করেনি।

বৈরুত থেকে বিবিসি সংবাদদাতা জনাথন হেড লিখেছেন, বৈরুতে তুলনামূলকভাবে দু’টি শান্তিপূর্ণ দিনের পর তিনি গতকাল ফের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।

এবারের হামলায় অন্তত একটি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে এবং উদ্ধারকারীরা রাতভর জীবিতদের সন্ধানে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ করেছে, জানান তিনি।

বিবিসি’র মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হিউগো বাচেগা বৈরুত থেকে জানিয়েছেন, গতকালের ওই বিমান হামলার ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় পর ধসে পড়া ভবনগুলো থেকে এখনও ধোঁয়া উঠছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার লেবাননের স্থানীয় সময় রাত আটটার কিছুক্ষণ আগে যখন প্রথম বিমান হামলাটি আঘাত হানে, তখন নিরাপত্তা কর্মী হাসান জাফর রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “এটি একটি গর্জনের মতো ছিল, যা প্রতি সেকেন্ডে আরও বাড়ছিলো।”

“এরপরই বিস্ফোরণ ঘটে। এক মুহূর্তের জন্য আমাদের চারপাশের সবকিছু ছাইয়ের মেঘে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি আমার বন্ধুদের খোঁজার চেষ্টা করেছি, যারা ভয়ে-আতঙ্কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিলো। কিন্তু ওই ছাই ভেদ করে তাদের দেখা পাওয়াটা কঠিন হয়ে গিয়েছিলো।”

ওইসময়ে মানুষ এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছিলো। ঠিক তখনই দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি হয়।

মূলত, গত প্রায় এক মাস ধরে লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েল দাবি করছে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহকে কাবু করতে তাদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে।

এদিকে, হেজবুল্লাহকে ‍‍`সর্বোচ্চ শক্তি‍‍` দিয়ে আঘাত করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েল পুরোদমে হামলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে লেবাননে পেজার এবং ওয়াকিটকিসহ নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

দু’টি আলাদা ঘটনায় হাজার হাজার পেজার এবং রেডিও ডিভাইস বিস্ফোরিত হওয়ায় কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। (বিবিসি) 

আর্কাইভ