• ঢাকা শনিবার
    ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বাইডেনের সুর বদল

চারদিকে শুধু ক্ষত-বিক্ষতের ছাপ, ধু-ধু মরুভূমির মতো পড়ে আছে কিছু অঞ্চল

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৪, ১১:২১ পিএম

চারদিকে শুধু ক্ষত-বিক্ষতের ছাপ, ধু-ধু মরুভূমির মতো পড়ে আছে কিছু অঞ্চল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজায় দীর্ঘ ৮ মাস ধরে নৃসংশ হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে ইসরাইলি বাহিনী। লাগাতার হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা। খসে পড়েছে বড় বড় ভবনের ইট-পাথর। স্কুল, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে হাসপাতালও। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নিরাপদ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত শরণার্থী শিবিরগুলোও। চারদিকে শুধু ক্ষত-বিক্ষতের ছাপ। ধু-ধু মরুভূমির মতো পড়ে আছে বেশ কিছু অঞ্চল। আর যেখানে মানুষের ভিড় সেখানে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। এক সময়ের প্রাণবন্ত শহর হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী। একই সঙ্গে অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকটও। 

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, গাজাকে বসবাসেরই অযোগ্য করে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে  আলজাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা এক সময় ‘প্রাণবন্ত শহর’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি গাজার উত্তরাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞের ভিডিও ফুটেজও পোস্ট করেছেন তিনি। 

লাজারিনি বলেছেন, ‘সীমাহীন ধ্বংসযজ্ঞ এবং জনশূন্যতার মাধ্যমে গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে ফেলা হয়েছে।’ এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সর্বশেষ হামলায় আরও অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। 

এতে করে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ভূখণ্ডটিতে মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৭ হাজার ২৩২ জনে। আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৩৭ জনে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল গাজায় তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। 

৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হয়ে গেছে। 

এছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। 
ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। তবুও টনক নড়ছে না ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। 

ভয়াবহ এ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বেশ কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা। অবশেষে সোমবার মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ হলেও তা নিয়ে এখনো রয়েছে ধোঁয়াশা। ৩১ মে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন বাইডেন। 

বাইডেনের প্রস্তাবে একটি যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। ইসরাইলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলি জিম্মিদের ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যা শেষ পর্যন্ত গাজা যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাবে। সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। যা পরিষদে গৃহীত হয়। এতে করে যুদ্ধ বন্ধে কিছুটা আশার আলো জাগলেও সেই আলোতে আবারও নেমে আসে অন্ধকার। বাড়তে থাকে জটিলতা। 

প্রস্তাব দিয়ে নিজেই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন বাইডেন। বললেন, শিগগিরই তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না। কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, বৈশ্বিক সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাবটি ইসরাইল ও হামাস পুরোপুরি গ্রহণ করেনি। 

মার্কিন বার্তা সংস্থা এবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইতালিতে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নেতারা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেন। শিগগিরই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো যাবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘না, সম্ভাবনা নেই। তবে আমি আশা হারাইনি।’ 

প্রস্তাবটিতে স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে সব ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তাসহ কয়েকটি পরিবর্তনের দাবি করেছে হামাস। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে ইসরাইলকে চাপ দেওয়ার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের প্রতি আহ্বান জানান হামাস নেতারা। তবে বাইডেনের ঘোষিত প্রস্তাবে এসব বিধান থাকলেও ইসরাইল শর্ত বাস্তবায়ন করবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনি সংগঠনটি

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ