প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৪, ১০:৩৭ পিএম
ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাগেরি কানি বলেছেন, ইসরাইলকে অবিলম্বে আইসিজের আদেশ বাস্তবায়নে রাজি করাতে এবং বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্য দেখানোর সময় এসেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে লেখা এক চিঠিতে আলি বাগেরি কানি একথা বলেন। মঙ্গলবার মেহের নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ প্রধানের কাছে ইরানের শীর্ষ কূটনীতিকের লেখা সম্পূর্ণ চিঠিটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
মহামান্য,
১৯ জানুয়ারি ২০২৪ (A/78/77-S/2024/174) তারিখের চিঠিসহ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যামূলক অভিযান সম্পর্কিত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পাঠানো পূর্ববর্তী চিঠিগুলোর অনুসরণে, আমি আবারও এটি প্রয়োজনীয় বলে মনে করছি। ইসরাইল অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চলমান গণহত্যার ব্যাপারে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং অনিবার্য দায়িত্বের ওপর জোর দেওয়া উচিত।
ব্যাপক নিন্দা ও বৈশ্বিক ক্ষোভ এবং ২৪ মে ২০২৪ তারিখের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশ সত্ত্বেও, দখলদার ইসরাইলকে ‘গণহত্যার অপরাধের প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশনের অধীনে এর বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং রাফাহ এলাকার বেসামরিক নাগরিকদের জীবনের ওপর ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে:
(ক) রাফাহ এলাকায় অন্য যে কোনো পদক্ষেপ, যা গাজার ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর ওপর আঘাত হানতে পারে এবং যা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে জীবনের জন্য হুমকির মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে- চলমান এমন সব ধরণের সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে;
(খ) জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবা এবং মানবিক সহায়তার জন্য রাফাহ ক্রসিং খোলা রাখতে হবে;
(গ) গণহত্যার অভিযোগের তদন্তের জন্য জাতিসংঘের উপযুক্ত অঙ্গগুলোর নির্দেশিত যে কোনো তদন্ত কমিশন, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন বা অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থাকে গাজা উপত্যকায় নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণকরণ’ নিশ্চিত করতে হবে।
আইসিজের আদেশের মাত্র একদিন পরেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাফাহ শহরের একটি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলার গভীর বেদনাদায়ক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। যে হামলায় অন্তত ৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। যা ফিলিস্তিনি জাতির ওপর ইসরাইলি গণহত্যার আরেকটি পর্ব হিসেবে পরিগণিত।
এটি সহ্য করা খুবই কষ্টকর করে যে, ইসরাইলি সেনাদের বিমান হামলা এবং স্থল অভিযান থেকে আশ্রয় নিতে এবং নিজেদের রক্ষা করার জন্য গত তিন সপ্তাহে প্রায় এক মিলিয়ন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক রাফাহতে পালিয়ে এসেছে। তাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে, তাদের যাওয়ার নিরাপদ কোনো জায়গা নেই এবং তারা শুধু একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পেতে চায়। অথচ সেখানে বর্জ্য, ধ্বংসস্তূপ এবং ধ্বংসাবশেষের স্তূপ ছাড়া কোনো ধরণের খাবার বা পানিও নাই। সবকিছু বিসর্জন দিয়ে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে চলেছে তারা। এমনকি ইসরাইলি শাসকের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে মানবিক সংস্থাগুলোর জন্য কোনো ধরণের সহায়তা এবং সুরক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
মহামান্য,
আমি আবারও বলতে চাই যে, ফিলিস্তিনি জাতির ওপর চালানো এই গণহত্যা বন্ধ ও প্রতিরোধ করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আইনি ও নৈতিক কর্তব্য। তাদের সমস্ত মানবিক চাহিদা অবিলম্বে এবং বাধাহীনতার সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করা অপরিহার্য। জাতিসংঘের দায়িত্ব রয়েছে তার সব সদস্য রাষ্ট্রকে আগ্রাসী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা।
এদিকে নিরাপত্তা পরিষদকে এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চলমান নৃশংসতার অবসান ঘটাতে এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাধ্য।
মহামান্য,
এই প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত প্রত্যাশিত যে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বাধ্যতামূলক অস্থায়ী ব্যবস্থা মেনে চলতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যা বন্ধ করতে বাধ্য করার জন্য ইসরাইলি সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতার জন্য উপলব্ধ সমস্ত উপায় ব্যবহার করুন।
উপরন্তু, আমি গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত ১৯৪৮ সালের কনভেনশন থেকে জেনোসাইড প্রতিরোধ করার বাধ্যবাধকতার ওপর জোর দিতে চাই; জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ২৪ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ করা নিরাপত্তা পরিষদের প্রাথমিক দায়িত্ব এবং সেইসঙ্গে এর ৯৯ অনুচ্ছেদের অধীনে আপনার দায়িত্বের কথা স্মরণ করার সময়, গণহত্যা প্রতিরোধের বাধ্যবাধকতার জুস কোজেন চুক্তিটি আমি অবশ্যই আন্ডারলাইন করতে চাই। যে সমস্ত রাষ্ট্র, বিশেষ করে যারা ইসরাইলি শাসনকে সমর্থন করে, তাদের আইনগতভাবে গণহত্যা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে, গণহত্যামূলক শাসনব্যবস্থাকে কোনো রকমের সহায়তা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
এটাও সুস্পষ্ট যে, একজন স্থায়ী সদস্যকে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে রাফাহসহ গাজায় ইসরাইলি গণহত্যামূলক হামলা বন্ধ ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধা দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে পঙ্গু করে দেওয়ার যে কোনো অপচেষ্টার দায়ভার কাঁধে চাপানো হবে নিরাপত্তা পরিষদের ওপর এবং বিশেষ করে সেই সদস্যের ওপর, যারা নিরাপত্তা পরিষদকে ইসরাইলি আগ্রাসনকে গণহত্যার প্রচেষ্টার সূচনা থেকে থামাতে বাধ্যতামূলক প্রস্তাব গ্রহণে বাধা দিয়েছে।
২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২৮ মার্চ ২০২৪ এবং ২৪ মে ২০২৪ তারিখে আইসিজের আদেশে নির্দেশিত অস্থায়ী ব্যবস্থাগুলোকে অবিলম্বে সম্পূর্ণরূপে এবং কার্যকরভাবে কার্যকর করার জন্য ইসরাইলি আগ্রাসী শাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে তা মানতে বাধ্য করার জন্য এটাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একতা প্রদর্শনের উপযুক্ত সময়।
মহামান্য,
আমরা নিশ্চিত যে, আপনার দক্ষ নেতৃত্বে ন্যায়বিচারের জন্য চলমান বৈশ্বিক দাবিগুলো উত্তরহীন থাকবে না।
মহামান্য, আপনার ওপর আমার সর্বোচ্চ বিবেচনার আশ্বাস অনুগ্রহ করে গ্রহণ করুন।
আলি বাগেরি কানি,
ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী।