• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ

গাজায় স্কুলে বিমান হামলায় ইসরাইলকে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৪, ১২:১৯ পিএম

গাজায় স্কুলে বিমান হামলায় ইসরাইলকে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় স্কুলে বিমান হামলায় ৪০ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইসরাইলের কাছ থেকে আরও বেশি স্বচ্ছতা আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসি বলছে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের ওই স্কুলের ওপরের তলার শ্রেণিকক্ষে একটি যুদ্ধবিমান দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

তবে মধ্য গাজার ওই স্কুলে হামাসের একটি লুকানো কমান্ড পোস্ট ছিল, ইসরাইলের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন গাজার হামাস পরিচালিত সরকারের তথ্য দপ্তরের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবেত।

অপরদিকে ইসরাইল বলছে, স্কুলটিতে হামাসের একটি কম্পাউন্ড ছিল, সেখানে হামলা চালিয়ে গত ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে জড়িত যোদ্ধাদের হত্যা করা হয়; যে হামলাটি আট মাস ধরে চলা যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছে।

এ হামলায় ইসরাইলে যেসব হামাসযোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে, তাদের পরিচয় প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইল অবশ্য নিহত ৯ হামাসযোদ্ধার নাম প্রকাশ করেছে।

হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে নিশানা করে ইসরাইল প্রায়ই সেসব জায়গায় বিমান হামলা চালায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানোর ঘটনা বিরল।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ইসরাইল আমাদেরকে জানিয়েছে, ২০ থেকে ৩০ জন জঙ্গিকে তারা টার্গেট করেছে এবং যাদের হত্যা করেছে বলে তারা বিশ্বাস করে, তাদের নাম প্রকাশ করবে। আমরা আশা করি, তারা প্রকাশ করবে, পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করবে।

এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি হামলায় নিহত নয় হামাস ও ইসলামিক জিহাদি যোদ্ধার নাম প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তথ্য যাচাই শেষে আরও চিহ্নিত করা হবে।

মিলার বলেন, বৃহস্পতিবারের ওই হামলায় ১৪ শিশু নিহত হয়েছে। আর গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৪ শিশু ও ৯ নারীসহ ৪০ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সাংবাদিক ও বাসিন্দারা বলছেন, স্থানীয় সময় বুধবার রাতে নৃশংস এ হামলা চালানো হয়। শরণার্থী শিবিরের স্কুলটি পরিচালনা করে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। হামলার সময় স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি অবস্থান করছিলেন।

সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিধ্বস্ত ক্লাসরুম ও মর্গের সামনে পড়ে থাকা লাশের সারি দেখা গেছে। সেখানে আহত এক নারী চিৎকার করে বলছিলেন, অনেক যুদ্ধ হয়েছে! আমরা অসংখ্যবার উচ্ছেদ হয়েছি। আমার সন্তানেরা যখন ঘুমাচ্ছিল, তখন তারা তাদের হত্যা করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলার পর ধ্বংসযজ্ঞের একটি দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন।

উদয় আবু ইলিয়াস নামে ওই স্কুলের বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ঘটনার সময় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমরা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই এবং ভবনের কাচ ও ধ্বংসাবশেষ আমাদের ওপর পড়ে। ধোঁয়ায় বাতাস ভরে গেল এবং আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। জীবিত বের হব ভাবিনি।

ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ওই সময় ৬ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ স্কুল কমপ্লেক্সে আশ্রয় নিয়েছিল।

প্রায় আট মাস ধরে চলা এই যুদ্ধের সময় বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ১৭ লাখ মানুষ অনেক স্কুল ও জাতিসংঘের অন্যান্য স্থাপনাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় আট মাসের লড়াইয়ে গাজায় অন্তত ৩৬ হাজার ৪৭০ জন নিহত হয়েছে।

গাজার রাফাহ শহরে ইসরাইলি হামলায় ৪৫ জন নিহত হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বশেষ এই হামলার ঘটনা ঘটল।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে হামাস প্রায় ১২০০ মানুষকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এরপর থেকেই গাজায় চলছে ইসরাইলের নির্বিচার হামলা।

আর্কাইভ