• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ইমরান খানের সঙ্গে কি সেনাবাহিনীর সমঝোতা হবে?

প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৪, ০৮:২৪ পিএম

ইমরান খানের সঙ্গে কি সেনাবাহিনীর সমঝোতা হবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির ৯মে লাহোরের গ্যারিসন পরিদর্শনে যান। ওই সময়ে তিনি সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা ৯মে (গত বছর) পাকিস্তানের ইতিহাসে কালো অধ্যায় তৈরিতে পরিকল্পনা করেছে তাদের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হতে পারে না।

গত বছর ইসলামাবাদের হাইকোর্টে একটি দুর্নীতি মামলা শুনানিকালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হাজিরা দিতে গেলে তাকে গ্রেফতার করার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তার দলের নেতাকর্মীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৯ মে পাকিস্তানে ব্যাপক সহিংসতা চালায় পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা।

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা রাস্তায় নেমে সহিংস বিক্ষোভ করেন। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর স্থাপনায়। হামলা থেকে বাদ যায়নি রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরও।

এ ঘটনার দুই দিন পর ইমরান খানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আগস্টে তাকে আবারও গ্রেফতার করে পুলিশ। দ্বিতীয়বার ইমরান খানকে গ্রেফতার করার আগে পিটিআইয়ের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এর ফলে ইমরান খানের দলের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিরোধের বিষয়টি জনসম্মুখে আসে।

৯ মে পাকিস্তানে যে ঘটনা ঘটেছে তার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থে ইমরান খানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যে ভাঙা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তার সংকট পড়েছে অর্থনীতিতেও। এর সফলে পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের জীবন কঠিন হয়ে উঠেছে।

২০২৩ সালের ৯ মে’র ঘটনায় পাকিস্তানের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনীটি চরম সংকটের মুখে পড়ে। দ্বিতীয়বার সংকটের মুখে পড়েছে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খানের দলের নেতাকর্মীদের নিরঙ্কুশ জয়ের ফলে। এ নির্বাচনে কারগারে থেকে দলকে বিজয়ের পথে নিয়ে গেছেন ইমরান খান।

পিটিআইয়ের সিনিয়র নেতা এবং খাইবার পাখতুনখাওয়ার সাবেক মন্ত্রী তৈইমুর ঘাড়রা বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের যে খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এটা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। তবে এটিকে সমাধানের পথে নিয়ে যেতে হবে। কারণ একটি রাষ্ট্রে শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক দল শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে না।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অগ্রভাগে থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হলেও তাদের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে এই সেনাবাহিনী।

২০১৮ সালের আগস্টে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইমরান খান। এরপরই বিরোধীদলের নেতারা অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তবে চার বছর পর অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ছিটকে পড়েন ইমরান খান। এ ঘটনায় তিনি সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করেন। যদিও সেনাবাহিনী তার এই অভিযোগকে অস্বীকার করে।

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হওয়ার ১২ মাস পর ইমরান খান ইসলামাবাদ জুড়ে লংমার্চ করেন। এতে তিনি গুলিবিদ্ধও হন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। ওই সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে অপসারণ করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে আসছিলেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ইমরান খানের এ অভিযোগ অস্বীকার করছে।

লাহোরে ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসমা ফয়েজ বলেন, পিটিআইয়ের সঙ্গে সেনাবাহিনীর এক সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এজন্য দলটির নেতাকর্মীদের এক ধরনের আত্মবিশ্বাস রয়েছে এবং তারা মনে করছে বর্তমান সংকট উতরে যেতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পিটিআই সামরিক, বিচারবিভাগ এবং আমলাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে জনসমর্থন।

তবে ৯ মে’র ঘটনার এক বছর পূর্তিতে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির আইএসপিআর জানিয়েছে, এ ঘটনায় যারা জড়িত ছিল তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। তারা একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ ঘটনাকে কালো দিন বলেও বর্ণনা করেছে।

আর্কাইভ