প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতে ‘দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্য’ সরবরাহের জন্য চীনের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন।
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে চীনকে এই নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয়া হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন এই মুহূর্তে চীন সফরে রয়েছেন। বুধবার (২৪ এপ্রিল) তিনি সাংহাই পৌঁছান। সেখানে তিনি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপর শুক্রবার বেইজিংয়ে যান। এরপর বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আরটির প্রতিবেদন মতে, চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ব্লিঙ্কেন হুমকির সুরে বলেন, ওয়াশিংটন এরই মধ্যে ১০০টিরও বেশি চীনা সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং দেশটির বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হুমকির প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রকে ভণ্ডামি করার অভিযোগ করেছে। বলেছে, একদিকে ইউক্রেনকে বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে স্বাভাবিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের অযৌক্তিক সমালোচনা করছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিসিটিভির প্রতিবেদন মতে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, যুক্তরাষ্ট্র-চীনকে অবশ্যই একের অপরের অংশীদার হতে হবে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বেইজিংয়ে সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে এক বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন।
চীনা প্রেসিডেন্ট মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে একে অপরের অংশীদার হওয়া উচিত, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। এমন অনেক সমস্যা রয়েছে যা পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে।
জিনপিং আরও বলেছেন, গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে দুই দেশ কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি করেছে। এখনও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে যেগুলোর সমাধান করা দরকার এবং এক্ষেত্রে আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
চীনা প্রেসিডেন্ট আরও যোগ করেছেন, আমি তিনটি প্রধান নীতির প্রস্তাব করেছি: পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমান সমান সহযোগিতা। তিনি বলেন, ‘চীন একটি সমৃদ্ধ ও উন্নয়নশীল যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়।
দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জিনপিং আরও বলেন, ‘যখন এসব মৌলিক সমস্যার সমাধান হবে, তখনই সত্যিকার অর্থে সম্পর্ক স্থিতিশীল হতে পারে, ভালো হতে পারে এবং সামনে এগোতে পারে। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রও চীনের উন্নয়নের ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেবে।ব্লিঙ্কেন এর আগে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠক সাড়ে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি স্থায়ী হয়। ওই বৈঠককে ‘ব্যাপক ও গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে ব্লিঙ্কেন রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এই বৈঠকের ব্যাপারে পরে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগর ও মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি রুশ প্রতিরক্ষা শিল্পে চীনের সমর্থনের বিষয়ে উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বৈঠকের শুরুতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ব্লিঙ্কেনকে উদ্দেশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক বিশাল জাহাজের মতো যা স্থিতিশীলই রয়েছে। তবে সম্পর্কের নেতিবাচক কারণগুলো এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়াং বলেন, সম্পর্ক সব ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। চীনের নীতিগত উন্নয়ন অধিকারকে অযৌক্তিকভাবে দমন করা হয়েছে এবং আমাদের মূল স্বার্থ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
জবাবে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে ব্লিঙ্কেন বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত নভেম্বরে যখন সান ফ্রান্সিসকোতে বৈঠককালে যে এজেন্ডা ঠিক করেছিলেন, তা এগিয়ে যাওয়ার জন্য সক্রিয় কূটনীতির প্রয়োজন। এর কোন বিকল্প নেই।
গত এক বছরের মধ্যে এটা ব্লিঙ্কেনের দ্বিতীয় চীন সফর। গতবছর জুনে চীন সফর করেন। সেই সফরের ফলে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা কিছুটা কমেছিল। এরপর নভেম্বরে সান ফ্রান্সিসকোতে বাইডেন ও জিনপিংয়ের বৈঠক হয়। প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের বৈঠকের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা আরও কিছুটা কমে।
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক আর খারাপ না হলেও এখনও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। তাইওয়ান নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আছে। ইউক্রেন যুদ্ধে চীন যেভাবে রাশিয়াকে সমর্থন করছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ।