প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৪, ০৯:২৭ পিএম
তেহরান বলছে, তারা নতুন করে কিছু করবে না। তবে ইসরাইল যদি ফের হামলা চালায়, তাহলে তারা শক্তিশালী হামলার মাধ্যমে জবাব দেবে। তবে সাম্প্রতিক এসব ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে তেমন একটা বক্তব্য দিতে দেখা যায় না। গত শুক্রবার তিনি ইরানের বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য রাখলেও তাঁকে এ ইস্যু নিয়ে চুপ থাকতে দেখা গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সাম্প্রতিক ভয়াবহ বিরোধিতার অবসান আপাতত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েল যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি শুক্রবার ভোরে ইরানের যে হামলা হয়েছে, সেটি তারাই চালিয়েছে। তথাপি হামলার হওয়ার কথা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের সামরিক বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতারা। তাদের কেউ কেউ কোনো ক্ষয়ক্ষতি ঘটেনি বলে ইসরায়েলকে ঠাট্টাও করেছেন।
শনিবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, এদিন কী ধরনের অস্ত্র দিয়ে হামলা হয়েছিল, কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে; ইরানের কর্মকর্তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় ইস্পাহান প্রদেশ ও তাবরিজের উত্তরাংশে অল্প বিস্ফোরকবাহী ড্রোন দিয়ে হামলা হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহহিয়ান আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিমকে বলেন, ছোট্ট চালকবিহীন বিমানের হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এবার ইসরায়েলের ড্রোনের মূল লক্ষ্য ছিল ইস্পাহান প্রদেশ, যা ইসলামিক নানা ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। প্রদেশটি আরও কয়েকটি কারণে বিখ্যাত। সেখানে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা, ইস্পাহান নিউক্লিয়ার টেকনোলজি সেন্টার ও একটি প্রধান বিমানঘাঁটি রয়েছে। এ বিমানঘাঁটি থেকেই ১৪ এপ্রিল ইসরায়েলে হামলা হয়েছিল। ইরানের শিল্প-কারখানাসমৃদ্ধ এলাকাও এটি। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তৈরির কারখানাও।
এ কারণে ছোট্ট পরিসরের একটি হামলার মাধ্যমে ইরানকে একটি শক্তিশালী সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসরায়েল। বার্তা হলো, গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিতে ইসরায়েল হামলা চালাতে সক্ষম। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষার রাডার সিস্টেমকে টার্গেটে পরিণত করেছিল, যা নাতাঞ্জকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এটার সফলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের চুপ থাকা ইরানের কর্মকর্তাদের রাজনীতি করার সুযোগ এনে দিয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে ‘কৌশলগত ধৈর্য ধারণে’র জন্য ইরানের প্রশংসা করা হচ্ছিল। তাদের নীতি ছিল, যে কোনো উস্কানি উপেক্ষা করে সরাসরি বা পাল্টা হামলা থেকে বিরত থেকে দীর্ঘ লড়াইয়ে টিকে থাকা। বর্তমানে তারা ‘কৌশলগত ভয় দেখানো’ পথ বেছে নিয়েছে। নতুন এ নীতি ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের কূটনৈতিক স্থাপনায় ইসরায়েলের চালানো হামলার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়েছে তেহরান। ওই হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের শীর্ষ সাত কর্মকর্তা নিহত হন। এ ছাড়া গাজায় ছয় মাস ধরে ইসরায়েলের চালানো ধ্বংসযজ্ঞ নিয়েও ইরানের ধর্মীয় নেতা চাপের মুখে ছিলেন।
সিরিয়া ও লেবাননে ইসরায়েল যে কেবল ইরানের সম্পদ, অস্ত্র, ভবন, ঘাঁটি ও সরবরাহকে লক্ষ্যে পরিণত করছে, এমনটা নয়। তারা টার্গেট করে ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাও করছে। কয়েক দশক ধরে চলছিল এ ছায়াযুদ্ধ, যা এখন রূপ পাল্টিয়ে সরাসরি লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক হামলা-পাল্টা হামলা একটি বিষয়কে পরিষ্কার করে, ভূখণ্ডে হামলা হলে তা পাল্টা হামলার পরিণতির দিকে এগোবে। কেউ যদি এটা করে, তাহলে তাকে অবশ্যই মূল্য দিতে হবে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন লোকজন। দূর-কাছের সব রাজধানী শহরে এমন চিত্র। মিত্র দেশগুলো উদ্বেগপূর্ণ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল আপাতত নিবৃত থেকেছে। সবাই চান সর্বত্রব্যাপী যুদ্ধ যেন ছড়িয়ে না পড়ে।