• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
অভিযোগ আম আদমি পার্টির

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জেলে ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ০৪:২১ পিএম

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জেলে ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’

দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল তিহার জেলে আছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তিহাড় জেলে ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলেছে তার দল আম আদমি পার্টি (আপ)।

আপ সরকারের শিক্ষা, পূর্ত দফতর এবং সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী আতিশী দাবি করেছেন, “জেলে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জেল প্রশাসনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন আতিশী।

সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা আগে ইডি আদালতে জানিয়েছিল, টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কেজরিওয়াল প্রতিদিন আম ও মিষ্টির মতো অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার খাচ্ছেন।

বর্তমানে তিহাড় জেলে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।

সিবিআই ও ইডির বিশেষ আদালতের বিচারক কাবেরী বাওয়েজার এজলাসে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অভিযোগ জানিয়েছে, ‘জামিনের জন্য মেডিক্যাল গ্রাউন্ড তৈরি করতেই’ মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল এই খাবার খাচ্ছেন।

এই মামলায় তিহাড় জেলের প্রশাসনের কাছ থেকে সম্পূর্ণ রিপোর্ট তলবের পাশাপাশি মি. কেজরিওয়ালের ডায়েট চার্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

‘মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে’

আতিশী জেল প্রশাসন এবং ইডি-র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন।

“২১ মার্চ থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালজীর সুগার লেভেল ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। তিনি কারা কর্তৃপক্ষকে ইনসুলিন দিতে বলেছেন। কিন্তু ইনসুলিন দিতে অস্বীকার করছে কারা কর্তৃপক্ষ। কেজরিওয়ালজীকে জেল প্রশাসনের ইনসুলিন না দেওয়ার ঘটনাই প্রমাণ করে যে তাকে খুনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে,” বলেছেন আতিশী।

একই সঙ্গে তার দাবি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়েই বিজেপি এই ষড়যন্ত্র করছে। তার দাবি, “দিল্লির জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হারাতে পারবে না বিজেপি। এরপরই কেজরিওয়ালজীকে খুনের ষড়যন্ত্র শুরু করে দেয় এরা।”

ক্যাবিনেট মন্ত্রীর আরও দাবি, আদালতে ইডির পক্ষ থেকে যে অভিযোগ জানানো হয়েছে তা ঠিক নয়। উল্টো তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন।

"অরবিন্দ কেজরিওয়ালজী জেলে থাকাকালীন যে বাড়িতে রান্না করা খাবার পাচ্ছিলেন সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করছে ইডি, যাতে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয় এবং মৃত্যু হয়।”

“আদালতে বারবার মিথ্যে কথা বলছে ইডি। আদালতে ইডি বলেছে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালজী বেশি করে চিনি দেওয়া চা-মিষ্টি খাচ্ছেন। তিনি কলা খাচ্ছেন।”

আতিশী ব্যাখ্যা করেছেন, “জেলে চিকিৎসকদের প্রেসক্রাইব করা ‍‍`এরিথ্রিটল সুইটেনার‍‍` দিয়ে তৈরি চা এবং মিষ্টি খাচ্ছেন কেজরিওয়াল। এখন কলা খাওয়ার কথা যে বলা হচ্ছে সে বিষয়ে বলতে চাই, সুগারের রোগীকে সবসময় সঙ্গে কলা বা টফি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসক।”

ইনসুলিনও নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।

“ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি থেকে খাবার আনা বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে জেলের খাবারের সঙ্গে কিছু মেশানো যায়। চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে না। এসবই অরবিন্দ কেজরিওয়ালজীকে খুনের চক্রান্ত।”

ইচ্ছাকৃতভাবে খাবারে শর্করার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে- ইডি

বিশেষ আদালতের বিচারক কাবেরী বাওয়েজার এজলাসে ইডি কিন্তু দাবি করেছে খাবারের তালিকায় উচ্চশর্করা যুক্ত খাবার ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবেই রাখা হচ্ছে।

আদালতে ইডি দাবি করেছে, মি. কেজরিওয়াল ইচ্ছাকৃতভাবে চিনিযুক্ত চা, আম, কলা, এক বা দুই টুকরো মিষ্টি, পুরি-আলু সব্জির মতো খাবার নিয়মিত খাচ্ছেন।

ইডি আরও দাবি করেছে এই জাতীয় খাবার খেলে যে ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারে সে কথা মি. কেজরিওয়াল ভালোভাবেই জানেন। তিনি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে স্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থা তৈরি করতে চান যাতে চিকিৎসার ভিত্তিতে ‘সহানুভূতিশীল’ আবহাওয়া সৃষ্টি করা যায়।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সরাসরি অভিযোগ তুলেছে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ‘চিকিৎসার কারণে জামিন পেতে চান’ অথবা জেলের পরিবর্তে ‘হাসপাতালে যেতে চান।‘

ইডির এই দাবির পর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে সে রিপোর্ট তলব করেছেন স্পেশাল জাজ।

আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইডির আইনজীবী। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, "কেজরিওয়াল রোজ আম-মিষ্টি খাচ্ছেন, ডায়াবেটিক রোগীর পক্ষে এটা ঠিক নয়। আমরা তার ডায়েট চার্ট আদালতের সামনে তুলে ধরেছি।

অন্যদিকে, সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে সপ্তাহে তিনবার ভার্চুয়ালি তার চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে আদালতে যে আবেদন জানিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, তা তিনি তুলে নিয়েছেন।

মি. কেজরিওয়ালের দাবি তার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত ওঠানামা করছে। সেই বিষয়টিকে নজরে রাখার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে সাথে পরামর্শ করতে চেয়েছিলেন তিনি।

আদালতে অন্য অভিযুক্তরা

বিশেষ বিচারক কাবেরী বাওয়েজা বৃহস্পতিবার দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় ধৃত আরেক অভিযুক্ত চনপ্রীত সিংকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইডির দাবি মি. সিং ২০২২ সালের গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আম আদমি পার্টির তহবিল দেখাশোনা করেছিলেন।

তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৫ই এপ্রিল। ইডির হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তাকে বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছিল।

ওই একই মামলায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়ার জেলের মেয়াদ ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষ আদালতে চলা মামলায় যোগ দিয়েছিলেন মণীশ সিসোদিয়া।

তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে সিবিআই।

ওই মামলাতেই তার পাশাপাশি অভিযুক্ত আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজির হন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট তার জামিনের আর্জি মঞ্জুর করে।

দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলা

দিল্লি আবগারি নীতিতে ২০২০-২১ সালে পরিবর্তন আনার সময় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে সিবিআই এবং ইডি। তাদের দাবি, আবগারি নীতিতে বদল এনে লাইসেন্সধারীদের ‘অবৈধভাবে সুবিধা’ পাইয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, লাইসেন্স ফি কমানো এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই লাইসেন্সের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছিল।

একই সঙ্গে ইডির দাবি এই পুরো ঘটনায় সাউথ গ্রুপের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিল আম আদমি পার্টি যা ব্যবহার করা হয়েছিল গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের সময়।

যারা ওই পরিবর্তিত আবগারি নীতির কারণে ‘বিশেষ সুযোগ’ পেয়েছিলেন তারা আপের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে সুবিধা পাইয়ে দেন। শুধু তাই নয়, ধরা পড়ার ভয়ে অর্থের হিসাব-কিতাবে হেরফেরও করা হয়েছিল।

এই মামলায় অভিযুক্ত মণীশ সিসোদিয়াকে ২০২৩ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে সিবিআই। পরে ওই বছরের নয়ই মার্চ অর্থ পাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে ইডি। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৮শে মার্চ দিল্লির মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন মণীশ সিসোদিয়া।(বিবিসি)

আর্কাইভ