প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০৬:০৬ পিএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকদের আশা ফিকে করে দিয়ে সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
পাকিস্তানে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করতে হবে। অর্থাৎ তার আগেই সরকার গঠন করতে হবে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও নওয়াজের দলের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট সরকার গঠনে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার ইসলামাবাদে জরুরি বৈঠক ডেকেছে পিপিপি। সেখানেই জোট গঠনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পিপিপির একটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগের জোট সরকারের মতো নওয়াজের দল এবারো প্রধানমন্ত্রীর পদটি নিজেদের কাছে রাখতে চায়। বিনিময়ে পিপিপিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট, জাতীয় পরিষদের স্পিকার ও সিনেটের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি পিপিপি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পিপিপি হয়তো এই শর্তেই রাজি হয়ে যাবে।
এদিকে জোটে মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা এমএনএর সদস্য সংখ্যা বাড়াতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে নওয়াজ শরিফের দল। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়েদে আজমের প্রধান চৌধুরী সুজায়েতের সঙ্গে আজ ইসলামাবাদে বৈঠক করবেন নওয়াজ শরিফ।
ধারণা করা হচ্ছে, এবার দুই মুসলিম লীগই একই জোটে থাকবে। উল্লেখ্য পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়েদে আজমের দখলে আছে জাতীয় পরিষদের ৩টি আসন।
এর বাইরে, স্বতন্ত্র ৬ জন প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে নওয়াজের দলে যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন আবার ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের সমর্থনে নির্বাচিত এমএনএ। পিটিআই-সমর্থিত ওই এমএনএ হলেন ওয়াসিম কাদের। নওয়াজের সঙ্গে যাওয়া বাকি পাঁচ এমএনএ হলেন- রাজা খুররম নওয়াজ, ব্যারিস্টার আকিল, পির জহুর হোসাইন কুরেশি, সর্দার শমসের মাজারি এবং ব্যারিস্টার মিয়া খান বুগতি।
এই ৬ জন এমএনএ পিএমএল-এনে যোগ দেওয়ায় দলটির এমএনএ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮১-তে। আবার দলটি যদি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়েদে আজমের সঙ্গে জোট বাঁধে সেক্ষেত্রে এমএনএ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৮৪-তে। এর সঙ্গে পিপিপির ৫৪টি আসন যুক্ত হলে জোটের মোট আসনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৩৮টিতে। যার অর্থ হলো সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চেয়েও ৪টি আসন বেশি থাকবে এই জোটের কাছে।
অপরদিকে দলীয় ব্যানারে নির্বাচন না করায় পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিত আসন লাভের ক্ষেত্রে বিপদে পড়তে পারেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টি সমর্থিত বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ বিষয়টি এড়াতেই অন্য দলকে সমর্থন বা সাময়িকভাবে অন্য কোনো দলের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
গতকাল রোববার পিটিআই প্রধান ব্যারিস্টার গহার আলী খান পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি জানিয়েছে।
পিটিআইয়ের এই নেতা জানিয়েছেন, তার দল সম্ভাব্য সবগুলো উপায় বা সুযোগ খতিয়ে দেখছেন। তবে পিটিআই নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) বা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে জোট বাঁধবে না।
এ বিষয়ে গহার আলী খান বলেন, আমরা তাদের উভয়ের সঙ্গেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। তাদের সঙ্গে সরকার গঠনের জন্য কোনো আলোচনা হবে না। (তাদের নিয়ে) সরকার গঠন করার চেয়ে বিরোধী দলে বসা ভালো কিন্তু আমরা মনে করি আমাদের (সরকার গঠনের মতো) সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে।
পিটিআইয়ের জন্য অপর বিকল্প হতে পারে মজলিশ-ই-ওয়াহাদাতুল মুসলেমিন। এ সময় এই দলটি পিটিআইয়ের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করেছে। পরে অবশ্য ইমরান খানের সঙ্গ ছেড়ে দেয় দলটি।
কিন্তু নওয়াজ ও বিলাওয়ালের দলের সঙ্গে স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ছোট দল যোগ দেওয়ায় ইমরান খানের সমর্থকদের পক্ষে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা কঠিনই হয়ে যাবে এক প্রকার। এ বিবেচনায় বলাই যায় যে, সরকার গঠনে ইমরান খানের সমর্থিত এমএনএদের সম্ভাবনা ফিকেই।