• ঢাকা শনিবার
    ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সংঘাতের পথে কি হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান?

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, ০৭:৫৮ পিএম

সংঘাতের পথে কি হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জর্ডানে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান সমর্থিত কট্টর জঙ্গি গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে।

এখন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানকে পাল্টা ‘জবাব’ দেওয়ার কথা বলেছেন।

এতে করে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবার সরাসরি ইরানে আক্রমণ করবে কিনা। তবে ইরানের ওপর কোনও আক্রমণ করা হলে ইরানও ইতোমধ্যে পাল্টা আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

যদিও কয়েক বছর ধরে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি অবশ্য এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আশাবাদী।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনি বছরের শুরুতে জর্ডানে মার্কিন বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটল। এর জেরে বাইডেন চাপে পড়েছেন।

যদিও এই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান, এই দুই দেশই জানিয়েছে যে তারা ‘যুদ্ধ’ চায় না।

কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে টানা হামলা ও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশ দু’টি ‘সংঘাতের দিকে হাঁটছে’ বলে মনে করছেন পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্লেষকরা।

সিরিয়ার সীমান্তবর্তী জর্ডানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয় বলে গত রোববার জানায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড। এ হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত হন, আহত হন ৩৪ জন।

হামলার জন্য ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছেন জো বাইডেন। হামলার জবাব খুবই কার্যকর উপায়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে হোয়াইট হাউস।

এই হামলার পেছনে কারা জড়িত সেটি স্পষ্ট না হলেও শুরু থেকেই সেন্ট্রাল কমান্ড ও বাইডেন ইরানকে দায়ী করছে। তবে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের এমন সন্দেহকে নাকচ করে দিয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ড্রোনটি আগে একটি বাসস্থানে পড়ার পর ঘাঁটিতে এসে পড়ে। এটি যদি সরাসরি আঘাত করতো, তাহলে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতো।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে জবাব দেবে, সে বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

৩০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউজে বিস্তারিত না বললেও তিনি এতটুকু বলেন, আমি মনে করি না, মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের ব্যাপক পরিসরে যুদ্ধ করার প্রয়োজন আছে।

ইরান-সমর্থিত এক মিলিশিয়া গ্রুপ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে এই হামলার দায় স্বীকার করলেও এই ঘটনায় ইরানকে দায়ী করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অর্থে আমি তাদের (ইরান) দায়ী মনে করি যে, যারা এসব করেছে, তাদের তারা অস্ত্র সরবরাহ করছে।

মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চায় যে এই হামলার জবাব দেওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা। উত্তরে তিনি সম্মতিসূচক জবাব দেন, হ্যাঁ।

এর আগে টাওয়ার ২২-এ হামলার এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

তখন তিনি বলেছিলেন, এ হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে উপযুক্ত সময়ে এবং উপায়ে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে…সবকিছুর জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহি করতে হবে এবং তা আমাদের ঠিক করা উপায়েই করতে হবে।

তবে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এর জবাব দিবে, সে বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিছুই জানাননি এখনও।

এর আগে পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং জানিয়েছিলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো এবং আমাদের বাহিনীর উপর হামলার উত্তর দেবো।

যুক্তরাষ্ট্র ‘টাওয়ার ২২’-এ হামলার জন্য ইরান সমর্থিত গ্রুপগুলোকে দায়ী করলেও শুরু থেকেই এ হামলায় সন্দেহভাজন গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান।

তবে এরপরও যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আক্রমণ করে, তাহলে তেহরানও মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন সম্পত্তির ওপর হামলা চালাবে; মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।

ইরান সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে এবং নজর রাখছে যে জর্ডানে মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতিক্রিয়া কী হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস শ্যানন এনবিসি নিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ধীরে ধীরে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করা শ্যানন মনে করেন, ইরান তার সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনী ব্যবহার করে পশ্চিমা স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হয়েছে।

যদিও ইরান প্রায়ই বলে, এই গোষ্ঠীগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর তাদের কোনও প্রভাব নেই। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও স্পষ্ট নন। তবে এই অস্পষ্টতাকেই বড় করে দেখছেন শ্যানন। বলছেন, এটি হিসাবের গড়মিল ও উত্তেজনার তীব্রতা বাড়িয়ে তোলার ঝুঁকি তৈরি করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে ‘অবিশ্বাস্যভাবে অস্থির’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অন্তত ১৯৭৩ সালের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এত বিপজ্জনক পরিস্থিতি বিশ্ব দেখেনি।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন আলোচনায় নিযুক্ত ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিশেষ দূত ফ্রাঙ্ক লোয়েনস্টেইন। এই হামলার ঘটনাগুলো কতখানি ইরানে প্ররোচনায় হচ্ছে সেটি শতভাগ নিশ্চিত না হলেও তিনি বলছেন, এ ধরনের কয়েক ডজন হামলা তারা আগেও চালিয়েছে। কিন্তু এর আগে তারা কখনো কোনও মার্কিন সেনাকে হত্যা করেনি।

শেষ পর্যন্ত এ দফায় যুক্তরাষ্ট্র-ইরান কোন যুদ্ধের দিকে গড়াবে কিনা সেটি স্পষ্ট না হলেও মার্কিন সেনা নিহত হওয়ায় এই উত্তেজনা সহসা থামছে না এমন ইঙ্গিতই করছেন বিশ্লেষকরা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ