প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩, ০৩:৫০ পিএম
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কিয়েভের সবচেয়ে বড় সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র। শুরু থেকেই ইউক্রেনের পাশে থেকেছে বাইডেন সরকার। অস্ত্র-গোলাবারুদসহ আধুনিক সব যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে দেশটিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরম মিত্রতার জোরেই ‘সুপার পাওয়ার’ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে এতদূর এগিয়েছে ইউক্রেন। তবে সামনের দিনগুলোতে কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (৪৫)।
২০২৪ সালের শেষেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রে। ভয়ের কারণটাও এখানেই। সরকার পরিবর্তন হয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বদলে ডোনাল্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এলেই বিপদে পড়বে ইউক্রেন। মঙ্গলবার জেলেনস্কির বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে সেই শঙ্কায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে কার্যকরীভাবে পরিবর্তন হতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধ। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘... (যুক্তরাষ্ট্রের) পরবর্তী রাষ্ট্রনীতি যা-ই হোক না কেন, তা ইউক্রেনের প্রতি অব্যশই ভিন্ন হবে। সেটা অর্থনৈতিকভাবেও। বিষয়টি আমাদের যুদ্ধের ওপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলবে।’
একই সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থার জায়গাটি তুলে ধরেছেন জেলেনস্কি। বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং আমি নিশ্চিত যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। যে বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত হয়েছি তা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা হবে।’
তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনের সেই আত্মবিশ্বসের জায়গাটি ভেঙে দিল ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার জেলেনস্কির বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই চলতি বছর নতুন সহায়তা অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার এবং রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন।
বলেন, ‘যেহেতু আলোচকরা বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে কাজ করে, এটি আমাদের আশা যে তাদের প্রচেষ্টা সিনেটকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি দেবে ... নতুন বছরের শুরুতে। এই বছরের অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে সিনেট এবং প্রশাসনের আলোচকরা তাদের চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য সরল বিশ্বাসে কাজ চালিয়ে যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত রীতিমতো বাজ পড়ার মতো। কারণ, গত কয়েক মাস ধরেই অর্থাভাবে পড়েছে ইউক্রেন। এমনকি গোলাবারুদের অভাবে সামরিক অভিযানও পরিকল্পনামতো পরিচালনা করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে কমাতে হচ্ছে আক্রমণের মাত্রা। গত কয়েকদিন ধরে লড়াইয়ের ময়দানেও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা না পাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি কিয়েভের।
চলমান এ সংকটের মধ্যেই যুদ্ধের জন্য আরও সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ সদস্য চাইছে দেশটির সেনাবাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধে এমন পরিস্থিতিতে বেশ রাজনৈতিক চাপের মধ্যে আছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধ কবে শেষ হবে এ বিষয়ের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যুদ্ধ কবে শেষ হবে তা ‘কেউ জানে না’।
আরও বলেন, আগামী বছর ১০ লাখ ড্রোন তৈরি করবে ইউক্রেন। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা পরের বছর এক মিলিয়ন ড্রোন তৈরি করব। আমাদের সৈন্যরা তাদের ব্রিগেডগুলোতে ইউক্রেনের তৈরি ড্রোন পাবে।’
প্রসঙ্গত, চলমান এ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশটির সরকারের প্রতি জনগণের বেশ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক পোলিংয়ে দেখা যায়, জেলেনস্কির সমর্থক ৮৪ থেকে ৬২ শতাংশে নেমে এসেছে।