• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সক্রিয় তালেবান, আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা

প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২১, ০৯:১৬ এএম

সক্রিয় তালেবান, আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল দেশটি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী অতি সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা। আফগানিস্তানের বেশ কিছু এলাকায় নতুন করে আস্তানা গেড়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।


ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে তারা। সবশেষ মঙ্গলবার (৬ জুলাই) পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশের সালমা ড্যাম এলাকায় একটি তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় তালেবান। এতে কমপক্ষে ১৬ সরকারি সেনা নিহত হন।


এতে করে আবার আতঙ্কের মুখে পড়েছে আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণ। নতুন করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তারা। তালেবানের হামলার মুখে প্রায় হাজার খানেক আফগান নিরাপত্তা বাহিনী পার্শ্ববর্তী তাজাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার খবরও এসেছে।


রয়টার্স জানিয়েছে, আফগানিস্তানে বিশ বছর ধরে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি সেনারা এখন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। আর তাই তালেবানের দাপট যে আরও বেড়েছে তার প্রমাণ আফগান সেনাদের এই সীমান্ত পাড়ি।


তাজিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানায়, তাজিকিস্তান ও চীন সীমান্তবর্তী বাদাকশান প্রদেশে তালেবানেরা ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ জেলা দখল করেছে। এরপর ১ হাজার ৩৭ জন আফগান সেনা তাজিকিস্তানের অনুমতি নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে দেশটিতে ঢুকেছে।


ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি বাগরাম থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু এ নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ওই ঘাঁটির দায়িত্ব পাওয়া আফগান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাতের আঁধারে না জানিয়ে মার্কিন সেনারা ঘাঁটি ত্যাগ করেছে।


মঙ্গলবার বিবিসির খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় ভোর রাত ৩টার দিকে সেনারা ঘাঁটি ত্যাগ করেন। জেনারেল আসাদুল্লাহ কোহিস্তানি বিবিসিকে এ কথা জানান। মার্কিন সেনারা ঘাঁটি ছেড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তারা এ খবর পান। ওই ঘাঁটিতে একটি জেলখানায় প্রায় পাঁচ হাজার তালেবান বন্দি ছিল, তাদের রেখে গেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন আইটেমের প্রায় ৩৫ লাখ জিনিস রেখে গেলেন মার্কিন সেনারা। এর মধ্যে ১০ হাজার বোতল পানি, এনার্জি ড্রিংকস, কয়েক হাজার চাবি ছাড়া মোটর গাড়ি, এ ছাড়া আরও সাঁজোয়া যান রয়েছে।


প্রসঙ্গত গত শুক্রবার মার্কিন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে যে তারা বাগরামঘাঁটি ছেড়ে দিয়েছে। তালেবানেরা দেশটির উত্তরাঞ্চলে নতুন করে কয়েকটি জেলা দখল করেছে। সেসব জেলা থেকে আফগান বাহিনী পালিয়ে যাওয়ারও খবর এসেছে।


প্রাদেশিক কর্মকর্তা জানান, সেনাদের দুর্বল মনোবলের কারণেই তালেবানেরা কোনো লড়াই ছাড়াই নতুন এলাকা দখল করেছে। ইতোমধ্যে তারা দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে। এদিকে এ পরিস্থিতিতে তালেবানেরা আবারও ক্ষমতায় আসতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।


যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েক বছর থেকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ শেষ করার পথ খুঁজছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছে- তালেবানের শর্ত অনুযায়ী সব বিদেশি সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে। আর এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তালেবানকে শর্ত দিয়েছে যে, তাদের নিয়ন্ত্রিত ভূমি অন্য কোনো চরমপন্থী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেবে না। অর্থাৎ আইএসের মতো গোষ্ঠীকে তালেবান আর সহায়তা করবে না। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে জো বাইডেন আসার পর তিনি সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কাজ শেষ হবে।


চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়বে মার্কিন সেনারা। চুক্তি মেনে তালেবান পশ্চিমা দেশগুলোর সেনাদের ওপর হামলা না করলেও আফগান সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা বাড়িয়েছে। দখল করে নিচ্ছে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নারীসহ সাধারণ আফগান নাগরিকেরাও তালেবান ঠেকাতে অস্ত্র হাতে নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কাও করছেন পর্যবেক্ষক মহল।

সবুজ/এএমকে

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ