প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৩, ০৩:৪৬ এএম
দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে ইসরাইলের আগ্রাসন। শোচনীয় পরিস্থিতিতে ভুগছে পুরো গাজা। চারদিকে শুধু ধ্বংসস্ত‚প। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মরদেহ। দাফনের জায়গা নেই। কুকুরের খাবার হয়ে উঠেছে লাশগুলো।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মুনির আল-বুর্শ সোমবার সকালে আলজাজিরাকে বলেছেন, রাস্তার কুকুররা আল-শিফা হাসপাতালের উঠোনে বেসামরিক লোকদের মৃতদেহ খাচ্ছে। কারণ বোমা হামলার মধ্যে মৃতদের কবর দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, জায়গা অথবা সুযোগের অভাবে মৃতদের দাফন করতে না পারায়, সেগুলোতে পচন ধরছে।
ডব্লিউএইচও বলেছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও জ্বালানির সংকটে পড়া হাসপাতালটি ‘প্রায় একটি কবরস্থান’ হয়ে উঠেছে। হুমকির মুখে রয়েছে শিশুরাও।
হাসপাতালটির প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাক্তার আহমেদ মুখাল্লাতি বলেছেন, সুবিধার অভাবে বেশ কিছু শিশু ইতোমধ্যেই মারা গেছে। জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে শিশুদের মৃত্যু ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
মিডল ইস্ট আইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারাক্রান্ত স্বরে আরও বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতির মানে হলো, আমরা তাদের একের পর এক মারা যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’
মৃতদেহ থেকে অচিরেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করেছেন মুখাল্লাতি। বলেছেন, লাশগুলো সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য রোগের বড় উৎস হবে। হাসপাতালের ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)-এর প্রতিনিধিত্বকারী একজন সার্জন একই উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, ‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ। হাসপাতালটিতে ৬০০ জন রোগী এবং ৩৭ জন শিশু রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ, পানি ও খাবার কিছুই নেই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভেন্টিলেটর না থাকলে মানুষ মারা যাবে।’
ইসরাইলি বাহিনী হাসপাতালটির আশপাশে বোমাবর্ষণ তীব্র করেছে। এমনকি রোগীদের হাসপাতালে আনার চেষ্টাকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে অবিরামভাবে আক্রমণ করছে। হাসপাতালের সামনে অনেক মৃতদেহের পাশাপাশি আহত মানুষ পড়ে রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের ভেতরে আনা সম্ভব হচ্ছে না। স্থল সেনারা শুক্রবার এটি ঘেরাও করার পর থেকে অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। হাসপাতালের গেটের কয়েক মিটারের মধ্যে ইসরাইলি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত গত তিন দিনে, ইসরাইলি স্নাইপারদের হামলার ভয়ে কেউ হাসপাতালে ঢুকতে বা বাইরে যেতে পারেনি। এদিকে হাসপাতালটির নিচে হামাসের একটি ভূগর্ভস্থ টানেল রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইসরাইলি সেনারা বলেছে, মাটির নিচে থেকে হামাস কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার পরিচালনা করছে। কিন্তু হামাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে।
ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমায়ার জানিয়েছেন, ‘হাসপাতালের আশপাশে মৃতদেহ আছে। সেগুলো নজরদারি করা যাচ্ছে না। কবর দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কোনো মর্গেও নেওয়া যাচ্ছে না।’
মুখাল্লাতি হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার এবং রোগীদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার অনুমতির জন্য নিরাপদ ও গ্যারান্টিযুক্ত করিডোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/