প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৩, ০৪:২৯ এএম
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হামলায় নিহত প্রতিদিন ২০০ লাশ কাফনে মোড়ান আবু সাহের আল-মাঘারি (৫৩)। দেইর আল-বালাহ শহরের আল-আকসা শহিদ হাসপাতালে ১৫ বছর ধরে লাশের কাফন মুড়িয়ে আসছেন। সাদা দাড়ির শান্ত স্বভাবের মানুষটি সব থেকে ভয়ংকর কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে বিগত বছরের চেয়ে এ বছরটা একেবারেই আলাদা। নতুন দিনের সঙ্গে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। ছিন্নভিন্ন দেহ থেকে শুরু করে পচা গন্ধযুক্ত লাশে ভরে থাকে পুরো হাসপাতাল। সব লাশের কাফনের দায়িত্ব একা হাতে পালন করে যাচ্ছেন।
তিনি এত লাশ আগে দেখেছেন কি-না জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখের পানি মুছতে মুছতে আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমি আমার জীবনে এত কঠিন সময় কখনো দেখিনি। আমি বছরজুড়ে দৈনিক ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০টি প্রাকৃতিক মৃত্যু দেখতাম। যাদের লাশ কাফন করতাম। কিন্তু এখন বেশিরভাগ দিনই লাশের সংখ্যা ২০০ পর্যন্ত হয়। আলজাজিরা।
আল-মাঘারি বলেন, ‘লাশের কাফন দিয়ে আমার দিন শুরু করি। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত কাজ করি। অধিকাংশ লাশ খুব খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছায়। কিছু কিছু লাশে শুধু হাড় দেখা যায়। বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংস্তূপের নিচে কয়েকদিন পড়ে থাকায় কোনো কোনো লাশ থেকে অসহনীয় গন্ধ বের হয়। অন্যান্য লাশ ছেঁড়া টুকরো হয়ে আসে। ছেঁড়া অঙ্গ ও প্রচণ্ড ক্ষতে ভরে থাকে শরীর।’ আরও বলেন, ‘যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি দুঃখ দেয় তা হলো শিশুদের কাফন দেওয়া। বাচ্চাদের ছেঁড়া অঙ্গগুলো দেখলে আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।’প্রতিদিনের ভয়াবহতা সত্ত্বেও আল-মাঘারি বরাবরের মতোই অধ্যাবসায়ের সঙ্গে তার কাজ চালিয়ে যান। শক্ত হাতে লাশ থেকে রক্ত ও ধুলো মুছে দেন। তারপর যাদের পরিচয় পাওয়া যায় কাফনের ওপর তাদের নাম লিখে দেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এই কাজটি তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তবুও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন এ বাস্তবতার মুখোমুখি হই। কাঁদার বা ভেঙে পড়ার সময় আমার নেই। আমি প্রায়ই ভাবি, আমার সন্তানরাও ইসরাইলের প্রাণনাশক হামলার শিকার হতে পারে। যে কোনো মুহূর্তে তাদেরও কাফন পরাতে হতে পারে।’
১৩ অক্টোবরের পর থেকে আল-আকসা শহিদ হাসপাতালে লাশের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। হাসপাতালের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-হাজের মতে, গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ২ হাজার ৪৭৬ ফিলিস্তিনির লাশ আল-আকসা শহিদ হাসপাতালে পৌঁছেছে।