প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৩, ০৩:৪৪ এএম
শনিবার ভোরে ইসরাইলে হামলা শুরু করে হামাস। প্রতিশোধ নিতে পালটা হামলা শুরু করে ইসরাইলও। দুই দিনের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত উভয়পক্ষের নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।
এ যুদ্ধের কারণে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার জীবন চরমভাবে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশার মানুষের ওপর কাল হয়ে নেমে এসেছে এ যুদ্ধ। তেমনই একজন- সাংবাদিক মোহাম্মদ রফিক মোহয়েশ।
গাজায় যখন ইসরায়েলি বিমানহামলা হয় তখন সাংবাদিক রফিক ও তার উদ্বিগ্ন পরিবার আশ্রয় খুঁজছিলেন। নিজেদের বাড়িতেই একটি ঘরে আবছা অন্ধকারে লুকিয়ে পড়েন তারা। রফিক বলেন, বোকার মতো ভাবছিলাম এটাই বাড়ির সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হতে পারে।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে সাংবাদিক রফিক গাজায় হামলা চলাকালে তার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। রফিক বলেছেন, আমার পাশে আমার স্ত্রী। বড় বড় চোখে সে তাকিয়েছিল। ভয়ে কাঁপছিল। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সে বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছিল। কিন্তু সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল।
রফিক বলেন, আমি আশা ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। তবে পরিবারের সবার চোখেমুখে থাকা ভয়ের ছাপ উপেক্ষা করতে পারছিলাম না। আমার বৃদ্ধ মা সারাজীবন ইসরাইলের সঙ্গে গাজার যুদ্ধ দেখেছেন। ইসরাইলের হামলা দেখেছেন। দুই বছরের নাতিকে তিনি সজোরে বুকে আঁকড়ে রেখেছিলেন। বাইরের সব হামলা থেকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, ওই ছোট্ট ঘরটিতে আমরা পরিবারের সবাই জড়ো হয়েছিলাম। আমার মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলে এবং বোন। সকালের এ সময়টায় আমরা হাসি, মজায় মেতে থাকি। কিন্তু এখন সবার চোখে জল। নীরবে সবাই প্রার্থনা করে যাচ্ছিলাম।
সাংবাদিক রফিকের বাড়ির বাহিরটা ততক্ষণে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছিল। পুরোনো ভবনগুলো ধসে পড়ছিল। বাতাসে ধুলা আর ধোঁয়া উড়ছিল। একেকটি বিস্ফোরণ হচ্ছিল আর রফিক ও তার পরিবার কেঁপে কেঁপে উঠছিল। যুদ্ধবিমানের শব্দে তারা কেঁপে উঠছিলেন।
সেই চরম মুহূর্তে রফিকের মনে পড়ে যায় সাংবাদিক হিসেবে তার দায়িত্বের কথা। রফিক নিজেকে বোঝান তার কথাই গাজাবাসীর জীবনীশক্তি। তিনি বলেন, সাংবাদিক হিসেবে আমার দায়িত্ব গাজার পরিস্থিতি যাদের কানে পৌঁছায় না সেসব বধির মানুষদের তথ্য জানানো। আমি ইসরাইলের সঙ্গে গাজার বড় বড় পাঁচটি সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করেছি। এসব হামলা থেকে বেঁচে ফিরে এসেছি। আমি জানি সাংবাদিক তার খবরের মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে গাজাবাসীকে নিরাপদ রাখার দাবি তুলে ধরতে পারেন।
রফিক বলেন, সারা দিন ধরে প্রতি ঘণ্টায় আমরা ফোনে কথা বললাম। শহরে থাকা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের খবর নিলাম। প্রতিবেশীরাও একে অন্যের খোঁজ নিচ্ছিল। এমনকি অপরিচিতরাও একে অন্যকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। তিনি বলেন, কিন্তু যতই সাহস দেখাই দিন শেষে আমরা ছিলাম শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত। দশকের পর দশক ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলা সংঘর্ষ দেখতে দেখতে বিপর্যস্ত। যাঁরা আজ ভোরের ভয়ংকর সংঘর্ষ দেখেছেন তাদের চোখে এখনো আতঙ্ক। বিস্ফোরণের শব্দ এখনো কেঁপে উঠছে বুক।
প্রতি মুহূর্তে যুদ্ধ নিয়ে গাজাবাসী শোক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তবুও গাজায় ঐক্য এবং স্থিতিশীলতাই মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা। ভয় এবং ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও গাজাবাসীর মনে আশা আর স্বপ্ন রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা দখলদার ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ। আর এটাই গাজাবাসীর শক্তি বলে মনে করেন এই সাংবাদিক।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন