প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৩, ০৭:২৫ পিএম
অতিভারি বর্ষণে ভারতের উত্তর সিকিমের জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে। এ ছাড়া বন্যায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। এর প্রভাবে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ছে তিস্তায়। ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও দেখা দিতে পারে বন্যা। তিস্তা অববাহিকার লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরে বন্যার পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
অন্যদিকে হিমালয়ার ছোট এই রাজ্যে আটকেপড়া পর্যটকদের হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে আনার কথা ভাবছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। খবর রয়টার্সের।
আবহাওয়া বিভাগ ও বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে হওয়া ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পানি মিলিয়ে এই পরিস্থিতি অন্তত আরও দুই দিন অব্যাহত থাকবে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়, গত কয়েক দিন ধরেই ভারতের সিকিমে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবার মাঝরাতের পর অতিভারি বৃষ্টি হয়েছে সেখানে। এতে তিস্তায় পানির পরিমাণ খুব বেড়ে যায়। এ সময় জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীতীরবর্তী লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিপাতের পর সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় সিকিমে কমপক্ষে ৪০ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা শুক্রবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন। এ ছাড়া উদ্ধারকারীরা এখনো নিখোঁজদের সন্ধান করছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
সিকিমের লাচেন উপত্যকার লোনাক হ্রদের ওপরে মেঘভাঙা বৃষ্টি হয় গত মঙ্গল ও বুধবার মাঝরাতের পর। তার সঙ্গে গত কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিপাতও ছিল। মেঘভাঙা বৃষ্টি বলতে সাধারণত অতিভারি বৃষ্টি, যা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় হয় তাকে বোঝায়।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, এক ঘণ্টায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১০ সেন্টিমিটার অথবা আধঘণ্টায় পাঁচ সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টি হলে সেটাকেই মেঘভাঙা বৃষ্টি বা ক্লাউড বার্স্ট বলা হয়। মূলত সেই বৃষ্টিপাতের পর পার্বত্য সিকিম রাজ্যের লোনাক হ্রদ বুধবার উপচে পড়ে এবং এর ফলে বিশাল বন্যা দেখা দেয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজ্যটির প্রায় ২২ হাজার মানুষের জীবনকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে এই বন্যা।
রয়টার্স বলছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিকিমের কর্মকর্তারা বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১৮ বলে জানিয়েছিলেন। তবে পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাজ্যের জরুরি পরিষেবার দলগুলো বন্যার পানিতে ভেসে আসা আরও ২২টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সিকিমের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছেন হাজারও পর্যটক। ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, এই অঞ্চলে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় তারা এখন হেলিকপ্টার ব্যবহার করে প্রায় ১৫০০ আটকা পড়া পর্যটককে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বুধবার সকাল থেকে তিস্তার উজানে পানির প্রভাব পড়ে। পরে দুপুর থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করে লালমনিরহাট ও রংপুরের বেশ কিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়। একই সঙ্গে উজানের অংশে বাঁধভাঙার সঙ্গে বৃষ্টিপাতও অব্যাহত আছে। ফলে যে পানি ইতোমধ্যে এসেছে সেটার সঙ্গে বৃষ্টির পানি যোগ হয়ে দুই থেকে তিন দিন বন্যাপরিস্থিতি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।
প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, এ মুহূর্তে কিছুটা কমের দিকে থাকলেও পানি আবার বাড়বে। দফয় দফায় থেমে থেমে বাড়বে। এতে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধার কিছু অংশ অর্থাৎ তিস্তা অববাহিকার তীরবর্তী যে অঞ্চল আছে, সেগুলোকে স্বল্প থেকে মাঝারি মেয়াদের বন্যার আশঙ্কা আছে।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতে সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাত নিয়ে তেমন শঙ্কা না থাকলেও দেশের বাইরে উজানের অংশের বর্ষণ নিয়ে শঙ্কা আছে। বৃষ্টি যতক্ষণ চলবে, ততক্ষণ ঝুঁকি ও ভয় আছে। কারণ ইতোমধ্যে যে পানি চলে আসছে সেটার সঙ্গে আরও পানি যোগ হলে আমাদের পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে। তবে ওই বৃষ্টি কমা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি। কমে গেলেই আশা করি বন্যা পরিস্থিতি উন্নত হবে।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/