• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভিসা নীতি

নির্বাচনকে ঘিরে গুজবের পালে হাওয়া দিচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩, ০৩:২৬ এএম

নির্বাচনকে ঘিরে গুজবের পালে হাওয়া দিচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যে আইন অনুযায়ী বছরের পর বছর সব দেশে ভিসা দেয় কিংবা বাতিল করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, সেই একই ভিসা নীতি বাংলাদেশের জন্য আলাদা ঘোষণা কেন? এমন প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মার্কিন সাংবাদিক।

জবাবে সদুত্তর মেলেনি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের। তবে কি বাংলাদেশের নির্বাচনে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর লাগাতার অপপ্রচার এবং গুজবের পালে বাতাস দেয়ার জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ কৌশল?

গেল ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করে দেশটি। ব্রিফিংয়ে বলা হয়- মার্কিন ভিসা নীতির ২১২‍‍`র এ , তিন এবং সি ধারা অনুযায়ী এই নীতি ঘোষণা করা হয়। যা সংক্ষেপে থ্রি সি নামে পরিচিত।

সে সময় বলা হয়েছিল বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এই ভিসা নীতি ঘোষণা করা হলো। আর এই ভিসা নীতি ঘোষণার চার মাসের মাথায় গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভিসা নীতি কার্যকর হওয়ার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র।

দেশটির পররাষ্ট্র দফতর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে কারো নাম উল্লেখ করা না হলেও যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে বলা হয়, এরা বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচারবিভাগের সদস্য এবং নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য।

সেখানে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে আরও কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারাও একই ভিসা নীতির আওতায় পড়তে পারেন।

এতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যের প্রতি সমর্থনকে প্রতিফলিত করে। একই সঙ্গে এই পদক্ষেপ যারা সারা বিশ্বে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চান তাদের প্রতিও সমর্থন।’

ভিসা নীতি নিয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি মিলার
যে থ্রি সি অনুযায়ী বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটি যে কোনো দেশের নাগরিকের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রেই বিবেচণা করে তারা। এমনকি নতুন করে এই ঘোষণার আগে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণার প্রয়োজন পড়লো কেন?

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতেরর মুখমাত্র ম্যাথিউ মিলারের সেই সংবাদ সম্মেলনে (২৪ মে) প্রশ্ন তুলেছিলেন এক সিনিয়র মার্কিন সাংবাদিক।

তবে ম্যাথিউর উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেননি মার্কিন সিনিয়র সাংবাদিক ম্যাট। বিফ্রিংয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে তাদের প্রশ্নোত্তরের পালা।

তিনি মিলারের কাছে জানতে চান এটি আবার নতুন করে ঘোষণা করার কী আছে? আইনেতো এটা বলা আছেই। জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা এটা আবার ঘোষণা করছি। যদিও মিলারের জবাব সিনিয়র সেই মার্কিন সাংবাদিককে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

মার্কিন আইনেই বলা আছে, কারো ভিসা বাতিল হলে কিংবা কাউকে ভিসা দেয়া না হলে সেটা শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই জানতে পারবেন। এর বাইরে কখনো কারো কাছে তা প্রকাশ করা হবে না।

এখন প্রশ্ন হলো যেটা কয়েক যুগ ধরে আইনেই বলা আছে এবং সেই আইন কার উপরে প্রয়োগ হলো- সেটা কেউ কোনোদিন জানবে না- এ বিষয়টি নিয়ে প্রথমে ২৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিসা নীতি ঘোষণা করলো? কেন ২২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি কার্যকরের কথা বললো?

গুজবের পালে বাতাস দেয়ার জন্যই কি ভিসা নীতির প্রসঙ্গ
এদিকে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা অপপ্রচার এবং গুজব। দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন প্ল্যাটফরম থেকে পরিকল্পিতভাবে অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে ছড়ানো হচ্ছে নানা গুজব, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জেনে বুঝে এসব গুজবের পালে বাতাস দেয়ার জন্যই নির্বাচনের আগে কিছুদিন পর পর ভিসা নীতির প্রসঙ্গ সামনে আনছে।

ভিসা নীতির ঘোষণার পর গত মে মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা নতুন ভিসা নীতি করেছি। বাংলাদেশের মানুষ, সরকার, প্রধানমন্ত্রী এবং সবার জন্য এটি সহায়ক হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য নতুন ভিসা নীতি সহায়ক হবে।’

তবে ক্ষমতা বদলের অংশ হিসেবেই ভিসা নীতির প্রবর্তন বলে মনে করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা ক্ষমতা বদলের কৌশলের অংশ। বাংলাদেশকে বাগে আনতে দেশটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

মেনন বলেন, ‘এটা কেবল দুরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের ‘রেজিম চেঞ্জে’র কৌশলের অংশ।’

সিনিয়র সাংবাদিক কুদ্দুস আফ্রাদের মতে ভিসা নীতি নিয়ে ঢাকঢোল পেটানো ভালো কোনো চর্চা নয়। তিনি বলেন, কোনো দেশের ভিসা দেয়া না দেয়া, তাদের নিজেদের বিষয়। তবে ঢাকঢোল পিটিয়ে এই ভিসা নীতি ঘোষণা করা অবশ্যই ভালো চর্চা না। এতে ভিসা দেয়া না দেয়ার ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগের সম্ভাবনা অনেক বেশি আছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে তারা ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে। আমাদের দেশে ভোট হলো কি না, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। তাদের মূল বিষয় স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কি না, বা হবে কি না। এই লক্ষণগুলো ভালো না। এটা দুর্বলের ওপর অত্যাচার।

ভিসা নীতি প্রয়োগের জন্য তিনি বেশ কিছু বিষয়কে সামনে নিয়ে আসেন। সিনিয়র এ সাংবাদিকের মতে, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো ছিল না। এখন উন্নয়নের দিক থেকে দুই দেশ মিত্র হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে না। কূটনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, ড. ইউনূসের বিচার এবং এবং চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের কারণে এমনটা হতে পারে।’

আবার বাংলাদেশের রফরেন পলিসির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের নীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা না। সে দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্তের সঙ্গে বাংলাদেশ সরাসরি না করছে না, কিন্তু অন্ধভাবে সমর্থনও করছে না। এটা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র একটু নাখোশ থাকতে পারে। যদিও নীতিগত অবস্থান থেকে বাংলাদেশ সঠিককাজটি করে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

মার্কিন ভিসা নীতির সমালোচনায় জর্জিয়া
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির সমালোচনা করেছে ককেশাস অঞ্চলের দেশ জর্জিয়া। সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে সরাসরি বিমান চলাচলে অনুমতি দিয়েছে রাশিয়া। ঠিক সে সময় দেশটির প্রতি মার্কিন ভিসা নীতির বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য বলছে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

তাদের মতে একটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কারণেই তাদের এমন নীতির আওতায় আসতে হয়েছে। যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা এমন নীতির বিরোধিতার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে ভাবতে আহ্বান জানিয়েছে।

জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট সালোম জোরাবিশভিলি এমন আচরণকে ‌‌‘উসকানিমূলক’ বলে উল্লেখ করেছেন। 

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ