প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ১২:৩৩ এএম
বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে ভুয়া তথ্যসূত্র দিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের প্রখ্যাত সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে সমালোচনার মুখে নীরবেই ভুয়া সেই সূত্রের নাম মুছে দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’ শিরোনামে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) বরাতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে পিটিআইয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা পরে সময় সংবাদকে জানান, আদৌ এ ধরনের কোনো খবর তারা প্রকাশ করেননি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) পিটিআইয়ের তথ্যসূত্রটি নীরবে মুছে দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
সরকারি বার্তা সংস্থা হওয়ায় ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে–এমন প্রায় সব দেশের সরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে পিটিআই। ফলে খবর প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তথ্য নিশ্চিত এবং দায়িত্বশীল থাকতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। পিটিআই যেহেতু রাজনৈতিক নিবন্ধ প্রকাশ করে না, তাই এ ধরনের একটি প্রতিবেদন তাদের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া কীভাবে প্রকাশ করল তার স্পষ্ট উত্তর না মিললেও ভারতের গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে ভারতীয় গণমাধ্যমকে অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বিরোধীরা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার ‘গুজব’ যখন বিএনপির হাতিয়ার
‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে ‘বাংলাদেশ দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকটের মুখে রয়েছে’, ‘২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন বিতর্কিত ছিল’–এমন নানা দাবি করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত এসব দাবিকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এবং প্রতিবেদনকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতেই সেখানে সূত্র হিসেবে পিটিআইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়।
নির্বাচনের আগে পিটিআইয়ের গ্রহণযোগ্যতাকে হাতিয়ার করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে গিয়ে বিএনপি ধরা পড়ে গেছে–এমনটাই বলছেন ভারতের গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকায় ‘একটি পিটিআই প্রতিবেদন: বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। পরে সেই প্রতিবেদনের সূত্র দিয়ে এবং মূল প্রতিবেদনের লিংক নিজেদের ফেসবুক পেজের কমেন্টের ঘরে দিয়ে পিটিআই-এর বিশ্বাসযোগ্যতা ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারবিরোধী প্রচারণা শুরু করে বিএনপির মিডিয়া সেল।
পিটিআই যেহেতু রাজনৈতিক নিবন্ধ প্রকাশ করে না, তাই এ ধরনের একটি প্রতিবেদন তাদের বরাত দিয়ে প্রকাশ হয়েছে বলে খবর বের হতেই সব মহলে শুরু হয় তুমুল হইচই।
যেভাবে পর্দা ফাঁস!
সময় সংবাদের পক্ষ থেকে সরাসরি যোগাযোগ করা হয় পিটিআই-এর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, খবরটি পিটিআই-এর নয়। কারণ, পিটিআই এ ধরনের কোনো নিবন্ধ প্রকাশ করে না। বিষয়টি নজরে রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, এ ধরনের রাজনৈতিক নিবন্ধ প্রকাশ করে না পিটিআই। আর প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে তো নয়-ই।
আরও জানা যায়, ভারতের ‘দ্য ওয়ার’ নামে একটি সংবাদমাধ্যম মোবাশ্বের হোসেন নামে নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। ওই প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘কেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’। প্রবন্ধের ভেতরে পিটিআই-এর পরিবেশন করা একটি ছবি ব্যবহার করা হয়। আর ছবিটি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
এ ঘটনায় বিস্ময় এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছেন খোদ ভারতীয় সিনিয়র সাংবাদিকরা। তাদের দাবি, এভাবে একটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার্থে ব্যবহার করা গ্রহণযোগ্য নয়।
এ বিষয়ে ভারতের বর্ষীয়ান সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচার করবে–এটা নতুন নয়। তবে সেই খবরের সত্যতা কিংবা বিকৃত করে প্রচার করাটা অপরাধ।’
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির গুজব ছড়ানোর বিষয়টি উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অপকৌশলের অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/