প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩, ০৫:০৩ পিএম
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে কয়েকদিন আগেই অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০-এর দুদিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনে বাংলাদেশকে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ তথা সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়ে আমন্ত্রণ জানায় নয়াদিল্লি। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই বিশ্বনেতাদের মিলনমেলায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে এই উপস্থিতির মাধ্যমে পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশের মাথা আরও উঁচু হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জি-২০ গ্রুপের সদস্য না হয়েও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের ব্যাপার। জোটে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগের সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্যে এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়া এবং তাতে যোগদান একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
সদ্য শেষ হওয়া জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশের রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে একই মঞ্চে বসে মাথ উঁচু করে কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল অধিবেশনে দেন দুই দফায় ভাষণও। শীর্ষ সম্মেলনের আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন মোদির সঙ্গে।
সম্মেলনকালে পুরো দিল্লিজুড়ে ২৮ দেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে ছেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাও। ভারতসহ বিশ্বের প্রায় সব গণমাধ্যমের বাংলাদেশের কথা ছিল প্রধান শিরোনামে। যাকে বাংলাদেশের বড় অর্জন হিসেবে দেখছে বিশ্ব-গণমাধ্যম থেকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ভারতের বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত বলেন, জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের উপস্থিতি দেশটির সম্মান বিশ্বের মানুষের কাছে উজ্জ্বল করেছে। আর তাতেই হিংসা বিরোধী শিবিরে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারকে এই অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে গুজবের বাক্স খুলতে চলছে পরিকল্পনা। আর গুজবের ভিত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কিছু দেয়াল-পত্রিকা কিংবা ওয়েব পোর্টটাল এমনকি কিছু ফেসবুক পেজকেও।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে সোসাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর জন্য বড়সড় অর্থ বরাদ্দ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের এক বৈঠকে তারেক রহমান মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে গুজব তৈরির পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং বাস্তবায়নের জন্য মোটা অর্থের বরাদ্দ করেন।
প্রায় ৫ দশক ভারতের শীর্ষস্থানীয় একটি বাংলা দৈনিকের কাজ করেছেন এই বর্ষীয়ান সাংবাদিক। মুক্তিযুদ্ধ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ। কিংবা সেনাশাসক থেকে বিএনপির জ্বালাওপোড়াও রাজনীতি এমন কী উন্নয়নের বাংলাদেশ- সবটাই নানা সময় তার লেখায় উঠে এসেছে। তিনি মনে করেন, আল কায়দার মতো সংগঠনের সঙ্গে যাদের সংযোগ তারা গুজবের মতো হাতিয়ার বেছে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের কালিমা দেয়ার চেষ্টা করবে-এটায় অস্বাভাবিক ভাবার কিছু নেই।
এই বিশ্লেষক সাংবাদিক মনে করেন, প্রত্যেক গুজবের একটা মাত্রা থাকবে। যখন সেই মাত্রা অতিক্রম করবে তখনই গুজব হিসেবে উল্টো যারা রটিয়েছে-তাদের বিরুদ্ধে বুমেরাং হিসেবে কাজ করবে। যে জাতি মুক্তিযুদ্ধ করেছে সেই জাতি গুজবকে গুরুত্ব দেবে না- এমন দৃঢ় বিশ্বাসও এই প্রবীণ সাংবাদিকের।3
গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হয় ব্রিকস সম্মেলন। ওই সম্মেলনেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিকস ও জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থান নতুন মাত্রা পেয়েছে।
সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশ্বনেতাদের সামনে বাংলাদেশের গুরুত্বকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল হয়েছেন। অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে বিশ্বনেতাদের ভাবনা জানার সুযোগসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলার অবারিত দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের এ উদ্যোগ। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্জন-উত্থানের প্রেক্ষাপটে এদেশের প্রতি বহির্বিশ্বের যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, জি-২০ সম্মেলনে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/