• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

কৃষ্ণসাগরে বেসামরিক শস্য জাহাজের বিরুদ্ধে হুমকি ‘অগ্রহণযোগ্য’: জাতিসংঘ

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৩, ০৭:৫৭ পিএম

কৃষ্ণসাগরে বেসামরিক শস্য জাহাজের বিরুদ্ধে হুমকি ‘অগ্রহণযোগ্য’: জাতিসংঘ

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

কৃষ্ণসাগরে বেসামরিক শস্য জাহাজের বিরুদ্ধে হুমকি ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (২১ জুলাই) জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজম্যারি ডিকার্লো একথা বলেন।

শস্য রফতানি চুক্তি থেকে রাশিয়া নিজেকে প্রত্যাহারের পর মস্কো ও কিয়েভের দেয়া বিবৃতির প্রেক্ষিতে রোজম্যারি ডিকার্লো বলেন, ‘কৃষ্ণসাগরে চলাচলকারী বেসামরিক জাহাজের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু সংক্রান্ত হুমকিগুলো অগ্রহণযোগ্য।’ এই শস্যচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, সুদান ও সোমালিয়ার মতন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা কৃষ্ণসাগরে সমুদ্র মাইন পোঁতার খবর নিয়েও উদ্বিগ্ন যা বেসামরিক নৌ চলাচলকে হুমকির মুখে ফেলবে।

ডিকার্লো আরও বলেন, এরইমধ্যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে এ ধরনের যে কোন কার্যক্রম থেকে দূরে থাকতে আমরা দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের শস্য বিশ্ববাজারে পৌঁছে দিতে জাতিসংঘ তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রাশিয়া সোমবার (১৭ জুলাই) ইউক্রেন শস্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের দিকে যাওয়া যেকোন জাহাজকে তারা সামরিক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করবে।

এরপরই কিয়েভ রুশ নিয়ন্ত্রিত বন্দরসমূহের দিকে যাওয়া জাহাজগুলোর জন্যেও সতকর্তা জারি করে।

এদিকে চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পরপরই বিশ্বজুড়ে বেড়ে যায় খাদ্য শস্যের দাম। একদিনের ব্যবধানেই টনপ্রতি গমের দাম বেড়ে যায় ১৫ থেকে ২০ ডলার।

বিবিসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শস্য চুক্তি বাতিল হওয়ার পরপরই ইউরোপের বাজারে গমের দাম ৮ দশমিক ২ শতাংশ ও ভুট্টার দাম বেড়ে গেছে সাড়ে ৫ শতাংশ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পাইকারি গমের বাজারে দাম বেড়ে গেছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন গম বিক্রি হচ্ছে গড়ে ২৬০ ডলারে।

শস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সতর্ক করে বলেছিলেন, রাশিয়ার খাদ্য ও সার রফাতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হলে মস্কো এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে।

এছাড়া মস্কোর দাবি, ইউক্রেন শুধু ধনী দেশগুলোর কাছে খাদ্য বিক্রি করছে। অথচ দরিদ্র দেশগুলো এখনও খাদ্য ঝুঁকিতে ভুগছে। অথচ চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ইউক্রেন এমন দেশগুলোকে শস্য রফতানিতে প্রাধান্য দেবে যারা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে।

ইউক্রেনকে বলা হয় ‘বিশ্বের রুটির ঝুড়ি’। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার পরই বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গম  রফতানিকারক দেশটি। শুধু গমই নয় সূর্যমুখী তেল, বার্লি, ভুট্টারও অন্যতম শীর্ষ উৎপাদক ও রফতানিকারক ইউক্রেন। বিশ্বের গমের বাজারের ১০ শতাংশ, ভুট্টার ১৫ শতাংশ এবং বার্লির ১৩ শতাংশ সরবরাহকারী ইউক্রেন। মূলত কৃষ্ণসাগরে অবস্থিত নিজেদের বন্দরগুলো দিয়েই খাদ্যশস্য রফতানি করে থাকে দেশটি।

কৃষ্ণসাগরের এই শস্যচুক্তি বাতিলের প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় খাদ্য সঙ্কট তৈরি হবে। ভবিষ্যতে এশিয়ার দেশগুলোও এতে আক্রান্ত হবে বলে জানিয়েছে জাপানের সংবাদ মাধ্যম নিক্কি এশিয়া। এই চুক্তি ভণ্ডুল হওয়ায় খাদ্য সঙ্কটের দেশগুলোতে আরও প্রকট হবে সমস্যা বলে জানিয়েছে কেয়ার ও সেভ দি চিলড্রেনের মতো সাহায্য সংস্থাগুলো।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের প্রধান সামান্থা পাওয়ার সম্প্রতি ইউক্রেনের বন্দরনগরী ওডেসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে বলেন, এই শস্য চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, সুদান ও সোমালিয়ার মতন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

বিশ্বে ইউক্রেনের গমের তৃতীয় বৃহত্তম ক্রেতা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০২২–২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ইউক্রেন থেকে ১৩ লাখ টন গম আমদানি করেছে।

 

জেকেএস/

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ