• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

গ্রিস: এথেন্সের কাছে ভয়াবহ দাবানল, পালাচ্ছেন বাসিন্দারা

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৩, ০৭:২৫ পিএম

গ্রিস: এথেন্সের কাছে ভয়াবহ দাবানল, পালাচ্ছেন বাসিন্দারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের কাছে ভয়াবহ দাবানল দেখা দিয়েছে। সোমবার (১৭ জুলাই) সেখানে পৃথক দু’টি দাবানল সৃষ্টি হয় এবং জোরে বাতাস প্রবাহের কারণে এথেন্সের নিকটবর্তী উপকূলীয় শহরগুলোর মধ্যেও তা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে বহু বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন এবং দেশটির একটি গ্রীষ্মকালীন শিবির থেকে এক হাজারেরও বেশি শিশুকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার (১৭ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে কুভারাস গ্রামে আগুন লাগার ঘটনাটি বেশ জোরালো বাতাসের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে গ্রীক ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ভয়াবহ এই আগুনে অন্তত পাঁচটি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এই আগুন লাগোনিসির সমুদ্রতীরবর্তী আবাসিক এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এটি মূলত গ্রীষ্মকালীন রিসোর্ট হিসেবে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। 

রয়টার্স বলছে, আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর বিস্তৃত এলাকায় ১০০ জনেরও বেশি নাগরিককে সরিয়ে নিতে সাহায্য করেছে পুলিশ। কালিভিয়া এবং অ্যানাভিসোসের আশপাশের অঞ্চলে আগুন আস্তাবলে পৌঁছে যাওয়ায় কয়েক ডজন ঘোড়াকে ট্রাকে করে সরিয়ে নেওয়া হয়।

গ্রীক ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র ইওনিস আর্টোপোইওস টেলিভিশন ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘উচ্চ বাতাসের কারণে, আগুন দুই ঘণ্টার মধ্যে ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।’

অগ্নিসংযোগকারী সন্দেহে পুলিশ একজন ব্যক্তিকে আটক করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, ২০ জন সৈন্য, ৬৮টি ফায়ার ইঞ্জিন, ১০টি বিমান এবং ৬টি হেলিকপ্টারের সহায়তায় ২০০ জনেও বেশি দমকলকর্মী আগুন নেভাতে লড়াই করছেন। এছাড়া প্রয়োজনে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোস্টগার্ডের নৌকা ও জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পৃথক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গ্রিসে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার পর গ্রীষ্মকালীন শিবির থেকে এক হাজারেরও বেশি শিশুকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মূলত ভূমধ্যসাগরীয় তাপপ্রবাহের প্রভাবে দেশটিতে দু’টি পৃথক দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এথেন্সের পশ্চিমে উপকূলীয় শহর লুট্রাকিতে আগুনের শিখা শিবিরের কাছে চলে আসায় ১২০০ শিশুকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্বের কাউভারাসে আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

রয়টার্স বলছে, তৃতীয় একটি অগ্নিকাণ্ড সোমবার বিকেলে শুরু হয় এবং এথেন্সের প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৮ মাইল) উত্তরে ডারভেনোচোরিয়া এলাকায় বন পুড়িয়ে দেয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সোমবার সারা দেশে মোট ৮১টি অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় লড়াই করছে এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও প্রবল বাতাসের কারণে মঙ্গলবার আরও তীব্র আগুনের জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র ইওনিস আর্টোপোইওস বলেছেন, মঙ্গলবারও খুব কঠিন একটি দিন হবে। আগুনের জন্য খুব বেশি ঝুঁকি রয়েছে। এদিন শক্তিশালী বাতাসও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, এথেন্স থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরেই দাবানল জ্বলছে। বেশ কিছু বাড়ি পুড়ে গেছে। সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রচণ্ড জোরে বাতাস বইছে। ফলে আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণেও আনা যাচ্ছে না।

এছাড়া দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোতে কিছুদিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছিল। এখন সেখানে ৭০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে।

গ্রিসে গ্রীষ্মকালে দাবানল সাধারণ বিষয়। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ ইউরোপের অনেক দেশের মতো গ্রিসেও তাপমাত্রা সমানে বাড়ছে। মধ্য গ্রিসে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে এথেন্স-সহ বেশ কিছু জায়গায় দাবানল-সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, ২০১৮ সালে গ্রিসের একটি দাবানলের বিপর্যয়ের স্মৃতি এখনও অনেকটাই তাজা। সেসময় এথেন্সের পূর্বাঞ্চলীয় সমুদ্রতীরবর্তী শহর মাটিতে দাবানলের ঘটনায় ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ