• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইউক্রেনে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা পাঠাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৩, ০৭:৪৮ পিএম

ইউক্রেনে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা পাঠাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সব বাধা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা পাঠাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য গত সপ্তাহে ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেয়ার ঘোষণার ছদিনের মধ্যে ইউক্রেনে পৌঁছে গেছে মার্কিনিদের পাঠানো এ বিপজ্জনক বোমা। খবর রয়টার্সের।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

তাভরিয়া মিলিটারি কমান্ড ইন সাউদার্ন ইউক্রেনের মুখপাত্র ভালেরি শেরশেন বলেন, ক্লাস্টার বোমাগুলো সবেমাত্র ইউক্রেনে পৌঁছেছে। ইউক্রেন টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ক্লাস্টার বোমাগুলো এখন আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‍হাতে।’

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, রুশ সেনাদের এ প্রতিরোধ ভাঙ্গার জন্য এখন সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হবে ক্লাস্টার বোমা।

মার্কিন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের অপারেশন্স পরিচালক লেফটেনেন্ট জেনারেল ডগলাস সিমস স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মুহূর্তে ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা পাঠানো হয়েছে।’ তবে ইউক্রেনীয়রা এ বোমা ব্যবহার শুরু করেছে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়।’

জুনের প্রথম সপ্তাহে অধিকৃত এলাকা থেকে রুশ সেনাদের হটিয়ে দিতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইউক্রেন। তবে তাদের এ অভিযান প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। কারণ ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণ শুরুর আগেই দখল করা অঞ্চলগুলোতে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে রুশ সৈন্যরা।

গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, ইউক্রেনকে তাদের ৮০ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে তারা ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমা পাঠাচ্ছে। তারপর থেকে ১২৩টি দেশে নিষিদ্ধ এ ক্লাস্টার বোমা পাঠানো নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র যুক্তি দিয়েছে, প্রায় ১৭ মাস আগে শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধ যেন দুর্বল হয়ে না পড়ে, তাই তারা কিয়ভকে ক্লাস্টার বোমা পাঠিয়ে সহায়তা করছে।

তবে বেসামরিক মানুষের জন্যও বিপদের কারণ হতে পারে বলে বিশ্বের বহু দেশে এ বোমাটি  নিষিদ্ধ রয়েছে। এ বোমা রকেট সদৃশ একটি কাঠামোর ভেতর থেকে।

এটি এমন এক ধরনের বোমা যার মধ্যে একাধিক বিস্ফোরক বা বোমা থাকে। গুচ্ছ বোমার একটি ক্যানিস্টার ১০টি থেকে শুরু করে শত শত ছোট বোমা বহন করতে পারে। ক্যানিস্টারগুলো বিমান, আর্টিলারি, নৌ বন্দুক অথবা রকেট লঞ্চার থেকে নিক্ষেপ করা যায়।

লক্ষ্যবস্তুর ওপর নির্ভর করে ক্যানিস্টারগুলো একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় এসে খুলে যায়। এরপর ভেতরে থাকা বোমাগুলো নির্দিষ্ট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ভূমির কাছাকাছি অথবা ভূমিতেই যেন বিস্ফোরণ ঘটে, সে লক্ষ্যে বোমা বিস্ফোরণে টাইমার ব্যবহার করা হয়।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর উভয় দেশই ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তুরস্কের দেয়া ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার শুরু করে ইউক্রেন। ক্লাস্টার অস্ত্র সরবরাহের জন্য গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।

ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপের পর তা বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে যায়। ফলে সামরিক বাহিনী ছাড়াও বহু বেসামরিক লোক ক্ষতির মুখে পড়েন।এছাড়া রেড ক্রসের ইন্টারন্যাশনাল কমিটির মতে, বোমা নিক্ষেপের পর কখনও কখনও ১০ থেকে ৪০ শতাংশ বোমার বিস্ফোরণ ঘটে না। অবিস্ফোরিত বোমাগুলো কয়েক বছর এমনকি কয়েক দশক পরও ফোটার সম্ভাবনা থাকে।

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এ অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিনিশনস (সিসিএম) অস্ত্রের মজুত, উৎপাদন এমনকি স্থানান্তরকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই কনভেনশনে ১২৩টি দেশ যোগ দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়াসহ ৭১টি দেশ এতে যোগ দেয়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের সেনা বা তাদের গাড়িবহরে হামলা করলে তা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় অপরাধ বলে গণ্য হবে না। তবে যদি এ বোমা কোনও বেসামরিককে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়, তাহলে সেটি যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হবে।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ