আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্কুল থেকে শিশুদের গণকবর সন্ধানের ঘটনায় কানাডার উইনিপেগ শহরে স্থাপিত যুক্তরাজ্যের রানী ভিক্টোরিয়া ও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছেন বিক্ষোভকারীরা। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) এ ঘটনা ঘটে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার আগে বিক্ষোভকারীদের চিৎকার করে বলতে শোনা যায় ‘গণহত্যায় কোনো গর্ব নেই’। সাম্প্রতিক সময়ে কানাডার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের বেশ কিছু গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ঘটনা কানাডাজুড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ডানা বেঁধেছে।
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং সাসকাচোয়ান প্রদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আবাসিক স্কুলে ১ হাজারের মতো শিশুর গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের অর্থায়নে এসব স্কুল ক্যাথলিক চার্চদের দ্বারা পরিচালিত হতো।
প্রায় দুইশ বছর আগের এসব স্কুলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের জোর করে তাদের পরিবার থেকে আলাদা করা হতো। এরপর তাদের ওপর চালানো হতো শারীরিক ও যৌন নিপীড়ন। অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের ২০১৫ সালে প্রতিবেদনে এ ঘটনাকে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
উইনিপেগ শহরে ম্যানিটোবা প্রদেশের আইনসভার সামনে থাকা রানী ভিক্টোরিয়ার ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা। অধিকাংশ বিক্ষোভকারী কমলা রঙের পোশাক পড়েছিলেন। এসময় মাটিতে পড়ে থাকা ভাস্কর্যটিকে লাথি দিতে দেখা যায়। অনেকে আবার এটি ঘিরে নাচতেও থাকে। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্যটিও ভেঙে ফেলা হয়। তিনি কানাডার বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান। রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে ১৮৩৭ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত কানাডা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের পক্ষে বৃহস্পতিবার কানাডার টরেন্টোতেও বিক্ষোভ হয়। স্কুলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওই ভুক্তভোগী শিশু ও নিপীড়ন থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সমর্থন রাজধানী অটোয়াতে ‘ক্যানসেল কানাডা ডে’ নামের বিক্ষোভে হাজারো মানুষ অংশ নেন।
বিষয়টি নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী কমলা রঙের পোশাক পড়ে ছিলেন, যা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্কুল থেকে শিশুদের গণকবর সন্ধানের ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন ‘এটা আমাদের দেশের ঐতিহাসিক ব্যর্থতাগুলো গভীরভাবে মূল্যায়ন করার বিষয়ে সঠিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে।’ কানাডার জাতীয় দিবস কানাডা ডে’র এক বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকার রানীর ভাস্কর্য অবমাননার নিন্দা জানায়’। তিনি আরও বলেন, ‘মর্মান্তিক ঘটনায় (শিশুদের গণকবর) আমরা কানাডার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সঙ্গে আছি। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের বিষয়টি নিয়ে কানাডা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি।’
জেডআই
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন