প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৩, ০৬:১৩ পিএম
রাশিয়ার ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের বিদ্রোহে রাশিয়ান পাইলটদের প্রাণহানি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ব্যর্থ এই বিদ্রোহে নিহত পাইলটদের প্রতি শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার গত সপ্তাহান্তে ব্যর্থ বিদ্রোহের সময় নিহত পাইলটদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। অবশ্য প্রিগোজিনের ওয়াগনার মিলিশিয়া যোদ্ধারা বিদ্রোহের সময় বেশ কয়েকটি রুশ বিমান গুলি করে ভূপাতিত করার কথা আগেই জানিয়েছিল।
গত শনিবার ওয়াগনার যোদ্ধারা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-ডন ও সেখানকার সামরিক কমান্ড সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তারপর তারা মস্কোর দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করে এবং বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘোষণার আগে ওয়াগনার যোদ্ধারা মস্কোর ২০০ কিলোমিটারের (১২৫ মাইল) মধ্যে পৌঁছে যায়।
ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বিদ্রোহ করার পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্য ভাষণে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘নিহত বীর-পাইলটদের সাহস এবং আত্মত্যাগ রাশিয়াকে মর্মান্তিক বিধ্বংসী পরিণতি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।’
ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহে কতজন পাইলট মারা গেছেন বা কতটি রুশ বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে থাকে এমন বেশ কিছু রুশ টেলিগ্রাম চ্যানেল গত শনিবার জানিয়েছিল, বিদ্রোহের পর দিনব্যাপী সংঘর্ষে ১৩ জন রাশিয়ান পাইলট নিহত হয়েছেন।
রাশিয়ান এই টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোর মধ্যে রাইবার নামে একটি চ্যানেলও রয়েছে এবং এর সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। তারাও এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে। রাইবার বলেছে, বিধ্বস্ত বিমানের মধ্যে তিনটি এমআই-৮ এমটিপিআর ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার হেলিকপ্টার এবং ক্রুসহ একটি আইএল-১৮ বিমানও রয়েছে।
রয়টার্স অবশ্য স্বাধীনভাবে এসব রিপোর্ট যাচাই করতে পারেনি। এছাড়া ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এসব বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং পাইলটদের হত্যা করা হয়েছে সেটিও স্পষ্ট নয়।
পুতিন বলেছেন, রক্তপাত এড়াতে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে শনিবারের বিদ্রোহকে চলতে দিয়েছিলেন। এছাড়া বিদ্রোহের জেরে যে প্রাণহানি হয়েছে সেটির জন্য ওয়াগনারকে দায়ী করেছেন তিনি।
পুতিনের ভাষায়, ‘তারা তাদের মিথ্যা বলেছে। তারা তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে: বন্দুকের গুলির দিকে, নিজেদের গুলি করার জন্য।’
এছাড়া নিজের বক্তৃতায় প্রিগোজিনের নাম উল্লেখ না করে পুতিন বলেন, ওয়াগনার যোদ্ধাদের মধ্যে যারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা হয় বেলারুশে স্থানান্তরিত হতে পারে বা তারা কেবল তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে।
একজন সিনিয়র রুশ আইনপ্রণেতা অবশ্য শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। লিওনিড স্লুটস্কি নামের ওই আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যেসব বিদ্রোহী যোদ্ধা আমাদের পাইলটদের হত্যা করেছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রযোজ্য নয়।’
তার ভাষায়, ‘এই লোকদের বিচারের আওতায় আনা উচিত এবং সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা উচিত।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার রোস্তোভ প্রদেশে প্রবেশ করেন ওয়াগনার সেনারা। পুরো বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন প্রিগোজিন নিজে। প্রথমে তারা রোস্তোভের সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দখল করেন। এরপর মস্কোর দিকে অগ্রযাত্রা শুরু করেন।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনী যে কথিত বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছেন সেটি রোস্তোভের এই সদর দপ্তর থেকেই পরিচালনা করা হতো।
ওয়াগনার বাহিনীর বহরটি প্রথমে রোস্তোভে যায় এবং রোস্তভ-অন-ডন শহর দখল করে। পরে সেখান থেকে ভোরোনেজে গিয়ে মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। আর ঠিক তখনই হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোঁড়া হয়। ওই বহরটিতে সাঁজোয়া যান এবং অন্তত একটি ট্যাংক ছিল।
এদিকে ওয়াগনার সেনারা যেন কোনোভাবেই মস্কোতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সেখানে আগেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। মস্কোর বিখ্যাত রেড স্কয়ারে লোহার ব্যারিকেডও দেওয়া হয়। প্রিগোজিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগুকে অপসারণের দাবি জানান।
পরে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের ওই লড়াই অনেকটা নাটকীয় ভাবেই থেমে যায়। মূলত ক্রেমলিনের সামরিক নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিয়ে রাজধানী মস্কো অভিমুখে যাত্রা করার ঘোষণা দেওয়া হলেও পরে তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় এক চুক্তিতে বিদ্রোহের অবসান হয়। যদিও সেই চুক্তির বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হয়নি।
বিএস/