• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ কী, তাতে আছেন কারা?

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৩, ১০:২৬ পিএম

রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ কী, তাতে আছেন কারা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভাড়াটে যোদ্ধা রাশিয়ায় অবৈধ হলেও দেশটির নিবন্ধিত কোম্পানি হয়ে ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করছে ওয়াগনার গ্রুপ। বেসরকারি সামরিক কোম্পানির হয়ে রাশিয়ার পক্ষে এখন ১০ হাজার ভাড়াটে সৈন্য ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে বলে ধারণা করা হয়।

সম্প্রতি ইউক্রেনের সৈন্যদের থেকে বাখমুতের দখল নিতে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল লড়াইয়ে এই যোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

নিজেকে বেসরকারি সামরিক কোম্পানি হিসেবে দাবি করা এই গ্রুপ রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করলেও রুশ সরকার এখন এর লাগাম টানার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

কিন্তু ওয়াগনার আসলে কী, কারা এই গ্রুপে এবং কী কাজ করছে, সেই সঙ্গে রুশ সরকার এখন কেন তাদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে, তা তুলে এনেছে বিবিসি।
ওয়াগনার গ্রুপ কী, কারা সেখানে?
আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পিএমসি ওয়াগনার’ নামে পরিচিত ওয়াগনার গ্রুপ প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। সেই সময় পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করছিল তারা।

যখন এটি একটি গোপন সংগঠন ছিল, তখন এর সদস্যরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কাজ করছিল। সেই সময় এর ৫ হাজার যোদ্ধা ছিল বলে মনে করা হয়, যাদের বেশিরভাগই রাশিয়ার অভিজাত বাহিনী ও বিশেষ বাহিনী থেকে আসা প্রবীণ অভিজ্ঞ যোদ্ধা। এর পর থেকে ওয়াগনারের কার্যক্রম যথেষ্ট বেড়েছে।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারিতে জানায়, ওয়াগনার এখন ইউক্রেনে তাদের প্রায় ৫০ হাজার যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ইউক্রেন অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে।

তারা বলছে, ওয়াগনার গ্রুপ ২০২২ সালে বিশাল পরিমাণে নিয়োগ দেওয়া শুরু করে; কারণ রাশিয়া তার নিয়মিত সৈন্যদের জন্য লোক খুঁজে পাচ্ছিল না।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল চলতি বছরের শুরুতে জানায়, ইউক্রেনে ওয়াগনারের প্রায় ৮০ শতাংশ যোদ্ধাকে আনা হয়েছে কারাগার থেকে।

ভাড়াটে যোদ্ধা রাশিয়ায় অবৈধ হলেও ২০২২ সালে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় ওয়াগনার গ্রুপ। এর পর তারা সেইন্ট পিটার্সবার্গে একটি সদরদপ্তর খোলে।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ডা. স্যামুয়েল রামানি বলেন, রাশিয়ার শহরগুলোতে বিলবোর্ডে প্রকাশ্যে নিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছে এই গ্রুপ। রুশ সংবাদমাধ্যমে একে ‘দেশপ্রেমিক সংগঠন’ হিসেবেও উল্লেখ করা হচ্ছে।

কী করছে তারা ইউক্রেনে?
পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার বাখমুত দখল নেওয়ার সময় ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিল ওয়াগনার গ্রুপ। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা বলছে, খোলা ময়দানে এই গ্রুপের প্রচুর পরিমাণ যোদ্ধাকে আক্রমণে পাঠানো হয়েছিল, ফলে অনেকে মৃত্যুও হয়েছে।

প্রথমে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ওয়াগনার গ্রুপের যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করেনি। যাই হোক ‘সাহসী’ ও ‘নিঃস্বার্থ’ ভূমিকা পালনের জন্য পরে এই ভাড়াটে যোদ্ধাদের তারা প্রশংসা করে।


রুশ সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে ওয়ানগারের দ্বন্দ্ব যেভাবে
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বারবার ওয়াগনারপ্রধান প্রিগোজিন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমোভকে অদক্ষতা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াগনার যোদ্ধাদের কম করে ইউক্রেনে পাঠানোর অভিযোগ তোলেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখন বলছে, তাদের হয়ে ইউক্রেনে কাজ করা ‘স্বেচ্ছাসেবক কাঠামোগুলোকে’ জুনের শেষের মধ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করতে হবে।
সরকারের এ ঘোষণায় ওয়াগনার গ্রুপের নাম না থাকলেও এই উদ্যোগকে সংগঠনটির ওপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন এক বিবৃতিতে জোর গলায় বলেছেন, তার বাহিনী এসব চুক্তি বয়কট করবে।

ওয়াগনার গ্রুপ আর কোথায় কাজ করছে?
২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ার রয়েছে ওয়াগনারের যোদ্ধারা। তারা সরকারপন্থি বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করছে এবং তেলের খনিগুলো পাহারা দিচ্ছে।
লিবিয়াতেও এই বাহিনী রয়েছে। তারা জেনারেল খলিফা হাফতারের অনুগত বাহিনীকে সমর্থন করছে।


ওয়াগনারের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ
ওয়াগনার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর গত জানুয়ারিতে নরওয়েতে আশ্রয়ের দাবি করেছিলেন ওই কোম্পানির সাবেক এক কমান্ডার। নিজেকে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের প্রত্যক্ষদর্শী বলেও দাবি করেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটররা তিনজন ওয়াগনার যোদ্ধার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের এপ্রিলে কিয়েভের কাছে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন।
এ ছাড়া ওই বছরের মার্চে ওয়াগনার কর্মীদের বিরুদ্ধে বুচা শহরের বাসিন্দাদের গণহত্যার অভিযোগ করেন জার্মান গোয়েন্দারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ফরাসি সরকার সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকে ধর্ষণ ও ডাকাতির অভিযোগও তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে।
২০২০ সালে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ওয়াগনার কর্মীরা ল্যান্ডমাইন স্থাপন করেছে বলে দাবি করে মার্কিন সামরিক বাহিনী।


এডিএস/

আর্কাইভ