• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এরদোয়ানের জন্য অপেক্ষায় যেসব চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৩, ০২:৪৮ এএম

এরদোয়ানের জন্য অপেক্ষায় যেসব চ্যালেঞ্জ

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নির্বাচনে জয়ী হয়ে আগামী ২০২৮ সাল পর্যন্ত তুরস্কের ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেট পেয়েছেন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। গত ২০ বছর ধরে এমন এক দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এরদোয়ান, যেটি একই সঙ্গে এশিয়া ও ইউরোপকে যুক্ত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করছে।

তবে গত দুই দশকে যেসব চ্যালেঞ্জ এরদোয়ানকে মোকাবিলা করতে হয়েছে, চলতি মেয়াদে সেসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও দু’টি— (১) লাগামহীন গতিতে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি যা ইতোমধ্যে তুরস্কের সাধারণ জনগণের জীবনযাপনের ব্যয় দিন দিন অসহনীয় করে তুলছে এবং (২) গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প, যার জেরে দেশটির গুরুতর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে  এবং প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এরদোয়ান তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বরাবর বিভাজনমূলক রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন; কিন্তু রাজনৈতিক দক্ষতা, ক্যারিশমেটিক ব্যক্তিত্ব ও সুবক্তা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে সুবিধে করে উঠতে পারেননি প্রতিদ্বন্দ্বীরা।

এমনকি সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনের ফলাফল গণনার প্রথম রাউন্ডেও নিজের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কেমাল কিলিচদারোগলু, যিনি এরদোয়ানের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির একজন বড় সমালোচক এবং ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন একনিষ্ঠ মিত্র— তার থেকে খানিকটা পিছিয়ে ছিলেন এরদোয়ান।

কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের পর চুড়ান্ত গণনায় দেখা যায়, ৫২ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে ফের নিজের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করেছেন এরদোয়ান।

এরদোয়ানের বিজয়ের পর তার সমর্থকদের উল্লাসও ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানী আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহরে তার দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা-কর্মী ও সাধারণ সমর্থকরা বিজয় মিছিল বের করেছিলেন রোববার। সেসব মিছিলে দলীয় পতাকা নাড়তে নাড়তে এরদোয়ানের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা। অনেকে আনন্দসূচক গানফায়ারও করেছেন।

ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর নিজের বাসভবন প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস থেকে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে এই বিজয় তুরস্কের জনগণকে উৎসর্গ করে এরদোয়ান বলেন, ‘এই জয় তুরস্কের জনগণের। আজ তুরস্ক জিতেছে এবং আমাদের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে— বিগত দিনগুলোর সমতো সামনের দিনেও সেসব চ্যালেঞ্জ আমার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মোকাবিলা করব।’

ইতোমধ্যে অনেক পশ্চিমা রাষ্ট্র-সরকারপ্রধান এবং রাজনীতিক এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব রাজনীতিতে তুরস্কের অংশগ্রহণ আরও বেশি মাত্রায় প্রত্যাশা করেন তারা।

তাদের এই বার্তার কারণও রয়েছে অবশ্য। মূলত এরদোয়ানের আপত্তির কারণেই সুইডেন ন্যাটোর সদস্য হতে পারছে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর কয়েকটি পদক্ষেপ আটকানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা ছিল তুরস্কের প্রেসিডেন্টের। এছাড়া গত বছর রুশ বাহিনী ইউক্রেনের অভিযান শুরুর পর কৃষ্ণসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইউরোপ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে খাদ্য সংকট শুরু হয়েছিল, তা নিরসনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চুক্তি স্বাক্ষরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তুরস্কের। মূলত তুরস্ক মধ্যস্থতা না করলে আদৌ সেই চুক্তি স্বাক্ষর হতো কিনা— তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।

নির্বাচনে জয়ের পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রথম ভাষণে এরদোয়ান বলেছেন, সামনে রাষ্ট্রপতির শপথ নেওয়ার পর ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ককে পুনর্গঠন এবং তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে সিরিয়ার ‘সেফ জোনে’ পাঠানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে তার সরকার। সিরীয়ার ‘সেফ জোন’ অঞ্চলটি বর্তমানে তুর্কি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।

গত দশকের বিশের দশকে উসামনীয় খিলাফতের অবসান করে আধুনিক তুরস্কের যাত্রা ঘোষণা করেন মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক। ওই সময় থেকেই কার্যত দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায় তুরস্কের জনগণ— রক্ষণশীলপন্থী ও উদারপন্থী। রক্ষণশীলরা তুরস্ককে একটি আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান, অন্যদিকে উদারপন্থীরা তুরস্ককে দেখতে চান একটি ধর্মনিরপেক্ষ বা সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে।

তুরস্কের ভোটারদের মধ্যে রক্ষণশীল ও উদারপন্থীদের অনুপাত অনেকটা কাছাকাছি। এরদোয়ানের মূল সমর্থক রক্ষণশীলপন্থী ভোটাররা এবং এরদোয়ানের আমলে গত ২০ বছরে তুরস্কে যত নির্বাচন হয়েছে— কোনোটিতেই উদারপন্থীরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি।

চলতি নির্বাচনের আগেও রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল—উদারপন্থীরা জয়ী হলে তুরস্কে সমকামীদের বিয়ে বৈধতা পেয়ে যাবে। নির্বাচনের বিজয়ের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এরদোয়ান বলেন, যতদিন তিনি ক্ষমতায় আছেন, তুরস্কে সমকামী বিয়ে আইনগত বৈধতা পাবে না।

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি ভোটের ভিত্তিতে হলেও একসময় এই পদটি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে অনেকটাই আলঙ্করিক ছিল। ২০১৪ সালে প্রথমবার দেশের প্রেসিডেন্ট হন এরদোয়ান এবং তারপর ২০১৭ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। তারপর ২০১৮ সালে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এরদোয়ান।

এর আগে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

আর্কাইভ