প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৩, ১১:০৬ পিএম
তুর্কি সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ ও পশ্চিমা ভাবাপন্ন অংশকে হতাশ করে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আবারও তার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেছেন। তুরস্কে গত ১৪ মে প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ের খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন এরদোয়ান।
রোববার (২৮ মে) তুরস্কে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে। প্রথম দফা নির্বাচনের পর এরদোয়ান এখন স্পষ্টভাবে এগিয়ে রয়েছেন। যদিও ভোটের আগে একাধিক জনমত জরিপে পিছিয়ে ছিলেন তিনি।
২০ ধরে বছর ক্ষমতায় থাকার পর ভোটের আগে বেশিরভাগ জনমত জরিপে দেখা যায়, বিরোধী জোটের প্রার্থী কামাল কিলিচদারোগলুর চেয়ে পিছিয়ে এরদোয়ান। তখন অনেকেই বলেছেন, এরদোয়ানের দিন শেষ হয়ে আসছে।
তিন অঙ্কের প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি তুরস্কে গত ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মুত্যু হয়। যা এরদোয়ান সরকারের দুর্বলতা ও অযোগ্যতাকেই প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল, এবার দেশটির শাসনের পালাবদল ঘটবে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেছিলেন, বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী কামাল কিলিচদারোগলু খুব সহজেই জয়ী হবেন। কামাল পরিচিত রাজনীতিক না হয়েও মানুষের জীপন-যাপনের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়ে একটি পরিচ্ছন্ন প্রচারাভিযান চালিয়েছিলেন।
তবে প্রথম দফার ভোটের পর বিরোধীদলের উচ্ছ্বাস এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে। কামাল কিলিচদারোগলু প্রথম দফার ভোটে ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ফলে অনেকেই আশাবাদী হয়ে ওঠেন যে, দ্বিতীয় দফার ভোটে তিনি এরদোয়ানের চেয়ে বেশি ভোট পেলেও পেতে পারেন।
কিন্তু প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট ভোটে তৃতীয় স্থান অধিকারকারী সিনান ওগানের কারণে সেই সম্ভাবনা ভেস্তে গেছে। রানঅফের ভোটে এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছেন ওগান। ফলে এরদোয়ানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাই এখন সবচেয়ে বেশি।
গত ১৪ মে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে পার্লামেন্ট নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে এরদোয়ানের জাতীয়তাবাদী জোট একে পার্টি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে কিলিচদারোগলু এরদোয়ানের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েছেন। যে কারণে বিরোধীদের মধ্যে হতাশা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এরদোয়ানের দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তার ব্যাখ্যা কী? সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো- গোটা দেশকে মেরুকরণের ক্ষমতা। তিনি জানতেন, তার জেতার একমাত্র সুযোগ হচ্ছে জাতীয়তাবাদের তাসটি খেলা। তিনি একটি নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে এটি করেছিলেন, যা ভীতিকর পরিস্থিতিকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল।
এরদোয়ানের কাজ আরও সহজ হয়ে যায় যখন একটি কুর্দি দল তাদের নিজেদের প্রার্থীর পরিবর্তে কিলিচদারোগলুকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কুর্দিদের দল পিপলস ডেমোক্রেসি পার্টি (এইচডিপি) একটি বৈধ রাজনৈতিক দল, যারা সহিংসতাকে প্রত্যাখান করে। তবে তুর্কি জাতীয়তাবাদীদের দৃষ্টিতে এই দলটির সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়।
বড় ডিজিটাল পর্দায় নেতিবাচক নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় এরদোয়ান ক্রমাগত দেখিয়ে এসেছেন, কুর্দিরা কিলিচদারোগলুর প্রার্থিতাকে মহিমান্বিত করছে।
এ জাতীয় মেরুকরণের পাশাপাশি এরদোয়ান ধর্মকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীদের সমকামিতা-সমর্থক ও মুসলিম পারিবারিক বন্ধনের বিরোধী শক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন।
তুরস্কে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সংবাদমাধ্যমের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এরদোয়ান নির্বাচনে বিরোধীদের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছেন। তাকে ভোট চুরি করতে হয়নি। তিনি কেবল তার প্রচার যন্ত্র এবং রক্ষণশীল জনগণের সঙ্গে তার দৃঢ় বন্ধনের ওপর নির্ভর করেছিলেন।
কিলিচদারোগলুও সম্ভবত তার নির্বাচনী প্রচারে অর্থনৈতিক মন্দার ওপর খুব বেশি জোর দিয়ে ভুল করেছেন। হ্যাঁ এটা সত্য যে, তুরস্কের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সেই সঙ্গে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতিও অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি এবং পরিচয়ের রাজনীতিকে টপকে যাবে এই অনুমান করাটা কিলিচদারোগলুর ভুল ছিল।
প্রথমত, বিরোধীরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে কুর্দিদের কারণে সৃষ্ট জাতীয় নিরাপত্তার হুমকির ছবিটা এরদোয়ানের জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় ভিত্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। কুর্দি ইস্যু সম্ভবত তুরস্কের রাজনীতিতে সবচেয়ে মেরুকরণ সমস্যা।
এডিএস/