• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে

প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৩, ০৫:০৬ পিএম

যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন অনেক আগেই সতর্ক করেছেন যে, জুন মাসের শুরুতেই দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তার সেই সতর্কবার্তার পর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়। কিন্তু কোনো সমাধানে আসতে পারেনি দেশটি। এ অবস্থায় শঙ্কা জেগেছে যদি যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে যায়, তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে।

জ্যানেট ইয়েলেনের সতর্কবার্তার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটির সর্বোচ্চ ঋণ গ্রহণ সীমা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দেন কংগ্রেসে। কিন্তু কংগ্রেসের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি নানা শর্ত দিয়ে সেই প্রস্তাব আটকে দেন। এরপর ম্যাককার্থিসহ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা এবং বাইডেনসহ হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তার দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেননি।

ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি দেউলিয়া হয়েই যায় তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি এবং বিশ্ববাজারে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপির এর বিশেষ প্রতিবেদনে।  

মার্কিন আর্থিক খাতে যা ঘটতে পারে
যদি মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ সরকারি ব্যয় সংকুলানে ব্যর্থ হয় তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে ভয়াবহ ধস নামবে, সুদহার বাড়বে, মর্টগেজ তথা বন্ধকের সুদহারও বাড়বে। এর ফলে, দেশটির জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।

Premium Photo | American dollar in man‍‍`s hand and stock market screen,  money chart background

এ বিষয়ে মুডিস অ্যানালিটিকসের অর্থনীতিবিদ বের্নার্ড জরোস বলেছেন, ‘এর ফলে, ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। এমনকি বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও আর ঋণ নিতে পারবে না।’ এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেক ছোট ছোট ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবারের ব্যয় বাড়বে। যা দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।  

বিশ্ব অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে
যুক্তরাষ্ট্র যদি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ গ্রহণ সীমা বাড়াতে ব্যর্থ হয় এবং দেশটিকে যদি ঋণ পরিশোধ অব্যাহত রাখতে হয় তবে তার প্রভাব হয়তো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিসের পল ভ্যান ডি ওয়াটার সাম্প্রতিক একটি ব্লগপোস্টে লিখেছেন, এই পরিস্থিতি তৈরি হলে অর্থাৎ মার্কিন সরকার যদি সরকারি ব্যয় মেটাতে ব্যর্থ হয় তবে তা দেশটির ঋণ গ্রহণ সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, ঋণদাতাদের অনাস্থা তৈরি হবে। এমনকি ডলারের আধিপত্যের জায়গায়ও ক্ষয় ধরতে পারে এবং কেন্দ্রীয় সুদহার বেড়ে যেতে পারে।

পল ভ্যান ডি ওয়াটার আরও বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যদি দেউলিয়া নাও হয় কেবল দেউলিয়া হওয়ার গুরুতর আশঙ্কাও বাজারকে ধ্বংস করতে এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে যথেষ্ট হতে পারে।’

ফ্রান্সের আইইএসইজি বিজনেস স্কুলের ইকোনমিক স্টাডিজের পরিচালক এরিক ডরের মতে, দেউলিয়া না হলেও কেবল এর আশঙ্কাই বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে যথেষ্ট। তার মতে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় মার্কিন সরকারের জারি করা বন্ডগুলোর বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। যা আখেরে মার্কিন অর্থনীতি তো বটেই বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।  
দেউলিয়া‍‍` হওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্র! ‍‍`দেউলিয়া‍‍` হওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্র!
এরিক ডর আরও বলেন, ‘ঋণ পরিশোধে এই উচ্চ ব্যয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়ের পরিমাণ কমে যাবে, এমনকি গৃহস্থালি ব্যয়ও কমে যাবে ফলে মানুষের মধ্যে ভোগ প্রবণতাও কমবে। যা যুক্তরাষ্ট্রে অতিদ্রুত একটি মন্দা ডেকে আনতে পারে।’ তার মতে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি ইউরোপ এমনকি বিশ্বের অন্যত্রও মন্দার সৃষ্টি করতে পারে।

সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেসের জিন রস এক সাম্প্রতিক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দেউলিয়া হওয়ার ফলে ডলারের ওপর নির্ভরশীল বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করবে।’

জিন রস আরও বলেন, ‘ডলারের প্রতি আস্থা হারানোর ফলে অর্থনৈতিক এবং বৈদেশিক নীতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। কারণ অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে চীন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ভিত্তি হিসেবে তাদের মুদ্রা ব্যবহারের জন্য চাপ দিতে এই যুক্তরাষ্ট্রের এই দেউলিয়াত্ব অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে।’

তবে আশার বিষয় হলো নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঋণ গ্রহণ সীমা বাড়াতে না পারে তারপরও তাদের কাছে আরেকটা সুযোগ রয়েছে। যেমন, বিভিন্ন খাতে যেসব সরকারি ঋণ রয়েছে সেগুলো পরিশোধ আপাতত স্থগিত এবং অন্যান্য সরকারি ব্যয় কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে বিভিন্ন ফেডারেল এজেন্সি, সামাজিক নিরাপত্তা খাত কিংবা চিকিৎসা সেবা খাতে ব্যয় কমিয়ে দিতে পারে।


ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের ইকোনমিক স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ ফেলো ওয়েন্ডি এডেলবার্গের মতে, এমন পরিস্থিতিতে এটিই হতে সবচেয়ে পরিচিত সিদ্ধান্ত। এর আগে, ২০১১ সালেও যুক্তরাষ্ট্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সে সময়ও সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল।

তবে বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমিয়ে তো আর সরকারি কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়া যাবে না। তাই এডেলবার্গের পরামর্শ হলো, সেক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আপাতত দেরি করে দেয়া যেতে পারে। 

 

জেকেএস/

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ