প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৩, ০২:৩৭ এএম
মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যারা ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছে, তারা বলছে, সেনাবাহিনী সরকারবিরোধীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যারা পারছে পালিয়ে জীবন বাঁচাচ্ছে। আর যারা পালাতে পারছে না, তাদেরসহই জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার (১২ মে) বিশেষ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। যেখানে গত দুই বছরে সাধারণ মানুষের ওপর জান্তা বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে জান্তা বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এছাড়া প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। সব হারিয়ে এক মানবেতর জীবন যাপন করছে হাজার হাজার পরিবার।
২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চি সরকারকে উৎখাতের পর থেকেই সংঘাত চলছে মিয়ানমারে। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাস্তায় নামলে সাধারণ মানুষের উপর চলে দমন-পীড়ন। অভ্যুত্থানের দুই বছরে দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বহু মানুষ।
এছাড়া ঘরবাড়ি হারিয়েছেন অন্তত দেড় কোটি। জাতিসংঘের তথ্য মতে দেশটিতে জান্তাবাহিনীর নিপীড়নে নিহত হয়েছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। এছাড়া আটকও করা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার।
সাগাইংয়ে নির্যাতনের শিকার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে আল জাজিরা। তাদের একজন ৩০ বছর বয়সী কিয়াও হসান। তুলে ধরেন সে সময়ের ভয়াবহতা। কিয়াও জানান, মিয়ানমারের সাগাইং এর গ্রামগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সাগাইং অঞ্চলটির অবস্থান মধ্য মিয়ানমারে। এই অঞ্চলের নদী তীরবর্তী গ্রাম কোন ইওয়ার। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সেনারা হামলা চালানোর মাত্র দুই ঘণ্টা আগে খবর পান গ্রামবাসী। এসময় যে যার মতো পালাতে শুরু করে।
গ্রাম থেকে বের হওয়ার একটাই পথ ছিল। সেটি আবার ছোট সেতু। সেতুটি কেবল মোটরবাইক বহন করতে পারে, কোন গাড়ি ছিল না। সেসময় কোনো মতে সেতু পাড়ি দিয়ে প্রাণে বাঁচলেও হারিয়েছেন নিজের শেষ সম্বলটুকু।
কিয়াও আরও বলেন, সেনাদের অভিযানের পরদিন তিনি গ্রামে ফিরে দেখেন সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া যারা শারীরিকভাবে দুর্বল থাকার কারণে পালাতে পারেননি। তাদের গুলি করা হয়েছে। অনেককে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উত্তর ও পশ্চিম দিকের প্রধান রাস্তা দিয়ে সেনাদের একটি দল কোন ইওয়ার গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছিল। গ্রাম থেকে বের হওয়ার একটাই পথ ছিল- পূর্বদিকে একটি দুর্গম পথ এবং একটি ছোট সেতু। সেতুটি কেবল মোটরবাইক বহন করতে পারে, কোন গাড়ি ছিল না।
`আমরা প্রায় এক হাজার লোক ছিলাম গ্রামে। সবার জন্য পালানোর একটাই রাস্তা। এটি ভীতিকর, কঠিন এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ছিল,` বলছিলেন ইওয়ারের বাসিন্দা কিয়াও হসান।
কোন ইওয়ার গ্রামের অধিকাংশের পেশা কৃষি। মিয়ানমারের সেনারা গ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই গ্রামবাসীরা দূর থেকে হতাশ দৃষ্টিতে দেখছিল, তাদের ধানের ক্ষেতজুড়ে ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলি আকাশে উঠছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, গ্রামকে গ্রাম পুড়িয়ে দিতে ‘ভ্যাকিউয়াম বোম’ ব্যবহার করেছে সেনারা।
কিয়াও হসান ওও জানান, সেনাদের অভিযানের পরদিন তিনি গ্রামে ফিরে দেখেন প্রায় ৬০০ পরিবারের গ্রামটির অধিকাংশ অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ৩৮৬টি পরিবারের কাঠ ও ইটের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। সমস্ত জিনিসপত্র- জামাকাপড়, আসবাবপত্র, খাবারের পাত্র ধংসের পাশাপাশি উদ্বাস্তু করে দিয়েছে তাদের। কেবল তাদের পরনের কাপড়টিই আস্ত রয়েছে।
সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, ধ্বংসযজ্ঞ শেষে গ্রামবাসীরা আবার যখন গ্রামে ফিরে আসে, তখন তারা ৫০ বছর বয়সী দু`জনের লাশ দেখতে পায়। শারীরিকভাবে দুর্বল থাকার কারণে ওই দু’জন পালাতে পারেনি। তাদের গুলি করা হয়েছে। আরেক ব্যক্তির দগ্ধ দেহ তার বাড়ির ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পাওয়া যায়।
জেকেএস/