• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ভারত-চীনকে যেভাবে টেক্কা দিলো জাপান

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৩, ০৬:৪৯ পিএম

ভারত-চীনকে যেভাবে টেক্কা দিলো জাপান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারত ও চীনকে কৌশলগত টেক্কা দিয়েই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজের সহযোগী হয়ে গেল জাপান। নিজেদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তৈরি করা জেটিকে সম্প্রসারিত করে ১৭ হাজার কোটি টাকায় বাংলাদেশকে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে দিচ্ছে জাইকা। এদিকে গভীর সমুদ্রবন্দরে সাড়ে ১২ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে আন্তর্জাতিক নোটিশ জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে আসা ২৩০ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ এমভি অউসু মারো ভেড়ানোর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বীকৃতি পেল মহেশখালীর মাতারবাড়ি। আর দুদিনের মাথায় আন্তর্জাতিক নোটিশও জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এখন থেকে কয়লার জেটিতে ২৩০ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১২ মিটার গভীর, দেড়শ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ অয়েল টার্মিনালে এবং দেড়শ মিটার দীর্ঘ ও ছয় মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশ করবে অস্থায়ী এক নম্বর জেটিতে।

একেবারেই অনিশ্চয়তা থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের। এশিয়ার দুই পরাশক্তি চীন ও ভারতের ভূরাজনৈতিক বিরোধের প্রভাব পড়েছিল এই মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণের কাজেও। বিশেষ করে প্রথম পর্যায়ে সোনাদিয়া এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সরকারের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। কিন্তু সমীক্ষা রিপোর্টে সোনাদিয়ায় বন্দর নির্মাণ নেতিবাচক হওয়ায় মাতারবাড়ি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। আর তাতে চীনের পাশাপাশি আগ্রহী হয়ে ওঠে প্রতিবেশী দেশ ভারতও। কিন্তু শক্তিধর দুই রাষ্ট্রের চাপের মুখে বাংলাদেশ অনেকটা নীরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। শেষ পর্যন্ত বন্দর নির্মাণে কাজে আসে জাপানি কৌশল।

মাতারবাড়ি বন্দরের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাফর আলম জানান সেই কৌশলের কথা, যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুগ্ধ করেছিল জাপান। তিনি বলেন, ২০০৭-০৮ সালের আগে চীন এই কাজটি করবে, এটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এরপর সরকার পরিবর্তন হলে সেখানে পিছিয়ে পড়ে চীন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ‘বিগ বি’ ধারণাটি দিলে শেখ হাসিনা সেটি গ্রহণ করেন।

এরপর ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয় মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রীর পাশাপাশি কয়লা খালাসের জন্য দুটি জেটি তৈরি করে জাপানি কর্তৃপক্ষ। এমনকি খনন করা হয় সাড়ে ১৬ মিটার গভীর, দেড় কিলোমিটার প্রস্থ এবং প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন চ্যানেল। আর এই অবকাঠামোকেই সামনে রেখে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় চট্টগ্রাম বন্দর।


তাতে প্রস্তাবনার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। চীন ও ভারতের জটিলতা এড়িয়ে জাপানের প্রস্তাব বাংলাদেশ লুফে নেয় বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, এখানে সবকিছু হয়েছে জাপান সরকার এবং জাইকার অর্থায়নে। ফলে চ্যানেলটি কাজে লাগাতে জাপানই বাণিজ্যিক বন্দর করার প্রস্তাব দেয়। যেটি লুফে নেয় বাংলাদেশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত কিংবা চীন এই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের দায়িত্ব পেলে সৃষ্টি হতো নানা জটিলতা। তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ত সমুদ্র-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশগুলো। ফলে বড় ধরনের সংকেটর মুখে পড়ত বাংলাদেশের বিশাল বিনিয়োগ। কিন্তু বিশ্বজুড়ে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে জাপানের সুনাম রয়েছে। আর তাতেই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ।

সাইফ মেরিটাইম লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার আবদুল্লাহ জহিরের মতে, এখন শুধু জাপান না, চীন, ভারতসহ যেকোনো দেশের জাহাজই বন্দরে ভিড়তে পারবে। কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু এটি যদি চীন বা ভারত করত, তাহলে দেখা যেত অনেকের মনঃক্ষুণ্নভাব থাকে সেটির বিরূপ প্রভাব পড়ত। এখন জাপানের মাধ্যমে কাজটি হওয়ায় বাংলাদেশ অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত।

আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে পুরোদমে অপারেশনে যাওয়ার কথা রয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকার এই গভীর সমুদ্রবন্দরের। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে এরই মধ্যে ১১৩টি জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে।


এডিএস/

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ