• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ষষ্ঠদিনে সংঘাত, সুদানে খাদ্য-পানি সংকট চরমে

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৩, ০২:৫৬ এএম

ষষ্ঠদিনে সংঘাত, সুদানে খাদ্য-পানি সংকট চরমে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আফ্রিকার দেশ সুদানের রাজধানী খার্তুমে এখন যে তীব্র লড়াই চলছে, তার ফলে সেখানে খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সঙ্গে পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহেও সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন শহরের বাসিন্দারা।

 

নাসরিন আল-সাইম নামে এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের আর মাত্র দুই দিনের খাবার আছে।’ 

সুদানের এই নারী জানান, তিনি ও তার পরিবার সাধারণত যে পরিমাণ খাবার খান, এখন সেই খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন, যাতে করে তাদের মজুদ করা খাবার আরও বেশি দিন যায়।

বিদ্যুৎ এবং পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক সুদানি পরিবার এখন সংকটে পড়েছে।

দেশটিতে গত ১৫ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী এবং প্যারা-মিলিটারি বাহিনী র্যা পিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই চলছে।

সুদানে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে সরকার চালাচ্ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, যিনিই কার্যত দেশটির নেতা এবং আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালু, যিনি ছিলেন উপ-নেতা। কিন্তু এই দুইজনের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দুই বাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে।

খার্তুমে মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সেখানে লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা আহমাদ আল-মান্দারি বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের সংঘাতে কমপক্ষে ৩৩০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছে ৩ হাজার ২০০ এর বেশি মানুষ। হতাহতদের মধ্যে বহু বেসামরিক নাগরিক রয়েছে। 

খার্তুমের উত্তরে বাহরি এলাকা থেকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সেখানে পানি সরবরাহের প্রধান পাম্পিং স্টেশনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা হিন্দ জানান, পানির সরবরাহ যেহেতু ঘন ঘন বিঘ্নিত হচ্ছে, তাই তিনি এবং তার পরিবার এখন পিপাসা মেটাতে ‘আবরি’ পান করছেন। আবরি হচ্ছে ভুট্টা দিয়ে তৈরি এক ধরনের পানীয়, যেটি সাধারণত লোকে রমজান মাসে পান করে।

হিন্দ জানান, তার এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ, কেবল কিছু বেকারি খোলা আছে। তবে এসব বেকারিতেও আর অল্প পরিমাণ ময়দা অবশিষ্ট আছে।

এই লড়াই শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে সেনাবাহিনী খাদ্য মজুদ করার জন্য জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছিল। তখন রাজধানী খার্তুমের বিভিন্ন স্থানে আরএসএফের বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছিল।

তবে খার্তুমের আরেকজন বাসিন্দা হেবা জানান, ‘কেবল অল্প কিছু পরিবার’ এই সতর্কতাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল, কারণ কেউ কল্পনা করেনি যে পরিস্থিতি এ রকম ভয়াবহ রূপ নেবে।

হেবা যে এলাকায় থাকেন, সেখানে দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। এর ফলে যারা খাদ্য কিনে মজুদ করেছিলেন, সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এই লড়াই কবে থামবে তা একদম বোঝা যাচ্ছে না। ফলে কতদিন খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হবে, সেটাও পরিষ্কার নয়।

এরই মধ্যে দুই দফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু বিবদমান দুই পক্ষই লড়াই অব্যাহত রাখায় যুদ্ধবিরতি টেকেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, খার্তুমের যেসব এলাকায় লড়াইয়ের তীব্রতা কিছুটা কমেছে, সেসব এলাকায় মুদির দোকানগুলো খুলেছে। এসব দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। তবে বোতল-জাত খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে খার্তুমের অন্য এলাকাগুলোতে লোকজন এখনো ভয়ে ঘর থেকে বেরুচ্ছে না।

খার্তুমের উত্তরের আরেকটি এলাকা রিয়াদের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে দোকানদাররা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে ডিম, মাংস বা পানীয়ের মতো পণ্যের দ্বিগুণ দাম চাইছে।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সুদানে তাদের ত্রাণ সাহায্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়ার পর। দার্ফুর অঞ্চলে তাদের তিনজন কর্মী নিহত হওয়ার পর গত ১৬ এপ্রিল জাতিসংঘ এই ঘোষণা দেয়।

 

বিএস/

আর্কাইভ