প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৩, ১০:০২ এএম
সুদানে সমস্ত কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)। দেশটিতে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো সংঘর্ষ চলছে। এতে সংস্থার তিন কর্মী নিহত হওয়ার পর রবিবার তারা এ ঘোষণা দেয়।
ডাব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যখন আমরা ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি, তখন সুদানে সমস্ত কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, ‘ডাব্লিউএফপি ভয়াবহ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন সুদানের জনগণকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আমাদের দল এবং অংশীদারদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে আমরা জীবন রক্ষার এই কাজ করতে পারব না।’
উত্তর দারফুরের কাবকাবিয়ায় সংঘর্ষে ডাব্লিউএফপির তিন কর্মী নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন। সংস্থার একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, নিহত তিনজনই সুদানি।
ম্যাককেইন আরো বলেছেন, শনিবার গোলাগুলির সময় সুদানের খার্তুম বিমানবন্দরে জাতিসংঘের মানবিক বিমান পরিষেবার (ইউএনএইচএএস) একটি বিমান ‘উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হওয়ার পর তাদের কর্মীদের জন্য কাজ করা কঠিন ছিল। ঘটনাটি সুদানে মানবিক কর্মীদের স্থানান্তর এবং সহায়তায় সংস্থার ক্ষমতাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এর আগে রবিবার জাতিসংঘ ডাব্লিউএফপি কর্মীদের হত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেছিল, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন।
সুদানের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন করার জন্য ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের ইন্টিগ্রেটেড ট্রানজিশন অ্যাসিসট্যান্স মিশনের প্রধান ভলকার পার্থেস একটি বিবৃতিতে বলেছেন, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক প্রাঙ্গণে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করার খবরে তিনিও আতঙ্কিত হয়েছেন। দারফুরের বেশ কয়েকটি স্থানে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক প্রাঙ্গণে লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার সাঁজোয়া যান, মেশিনগানসহ ট্রাক এবং যুদ্ধবিমান রাজধানী খার্তুমের পার্শ্ববর্তী শহর ওমদুরমান এবং সারা দেশের ফ্ল্যাশপয়েন্টগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু রাজধানীতেই প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুই পক্ষই ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা আলোচনা করতে রাজি নয়। অন্যদিকে সংঘর্ষ বন্ধে কূটনৈতিক চাপ বাড়ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘের মহাসচিব, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান, আরব লীগের প্রধান এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের প্রধানসহ শীর্ষ কূটনীতিকরা দুই পক্ষকে সংঘর্ষ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সংকটের বিপরীতে অবিলম্বে শত্রুতার অবসান এবং সংলাপে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। সুদানের অংশীদার আরব রাষ্ট্রগুলো—কাতার, মিসর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অনুরূপ আবেদন করেছে।
সুদানের ডাক্তারদের সিন্ডিকেট জানিয়েছে, সুদানের সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে রবিবার অন্তত পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৭৮ জন আহত হয়েছে। ফলে দুই দিনে মোট মৃতের সংখ্যা ৬১ এবং আহতের সংখ্যা ৬৭০ জনের বেশি।
শনিবার জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের অনুগত সেনা ইউনিট এবং হেমেদতি নামে পরিচিত জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বে আরএসএফের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তারা দুজন বাহিনীতে যোগদানের পর এটি প্রথম এজাতীয় সংঘর্ষ।