প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩, ০৫:০২ পিএম
পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির পর আর পড়া হয়নি। তবে পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছা ছিলই। আর সেই ইচ্ছা হারিয়ে দিলো বাকি সব প্রতিবন্ধকতাকে। সংসার সামলেও ছেলের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে বসছেন শান্তিপুরের লতিকা মণ্ডল।
মেয়ে স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছেলে এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেই যে সব বাধা অতিক্রম করা যায়, তা দেখিয়ে দিলেন শান্তিপুর থানার নৃসিংহপুর নতুন সর্দারপাড়ার বাসিন্দা বছর ৩৮ এর লতিকা মণ্ডল। ধুবুলিয়ার বাসিন্দা লতিকার সঙ্গে বছর কুড়ি আগে বিয়ে হয় শান্তিপুরের নৃসিংহপুরের অসীম মণ্ডলের। বিয়ের আগে পারিবারিক আর্থিক অনটনের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণির বেশি আর পড়া হয়ে ওঠেনি লতিকার। তবে পড়াশোনার ইচ্ছা ছিলই। বাড়িতে দৈন্য আছে। স্বামী পেশায় দিনমজুর। সংসার সামলে ছেলে-মেয়েকে বড় করার মধ্যেই বারবার টানত তাঁকে পড়ার বইগুলো।
রাস্তা বাতলে গিয়েছিলেন এক প্রতিবেশী। তাঁর দেখানো পথেই ভর্তি হওয়া রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে। ২০২০ সালে সেখান থেকে ভালো ফল করে উত্তীর্ণ হলেন মাধ্যমিকে। তত দিনে মেয়ে স্কুলের গণ্ডি পার করে কলেজের পথে। আর ছেলে পরের বছরই পাস করল মাধ্যমিক। ২০২১ সালে নৃসিংহপুর হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে ভর্তি হলেন লতিকা। ছেলে সৌরভ পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহারাজা হাইস্কুলের ছাত্র। সে এই বছরই কলা বিভাগ থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। দু’জনে আলাদা স্কুলের হলেও এই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মা ছেলে দু’জনেই। ইংরেজি, বাংলা ছাড়াও লতিকার বিষয়গুলির মধ্যে আছে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, শিক্ষাবিজ্ঞান এবং সংস্কৃত।
সংসার চালাতে স্বামীকে সাহায্য করতে তাঁত বোনার কাজও করতে হয় লতিকাকে। সেই কাজের ফাঁকেই চোখ বুলিয়ে নেন পড়ার বইয়ে। তাঁতের পাশেই রাখা থাকে তাঁর বই। গৃহশিক্ষক নেই। কখনো মেয়ে, কখনো প্রতিবেশী এক তরুণী তাঁকে দেখিয়ে দেন পড়া। সাহায্য পান নৃসিংহপুর হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের থেকেও। তাঁর পরীক্ষার আসন পড়েছে হরিপুর হাইস্কুলে। ছেলের আসন অম্বিকা হাইস্কুলে। লতিকা বলেন, ‘পড়াশোনা আবার শুরু করার ইচ্ছা ছিল খুব। কিন্তু কীভাবে শুরু করতে হবে জানতাম না। এলাকার একজন তখন জানালেন মুক্ত বিদ্যালয়ের কথা। স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে বাড়ির সকলে যতটা সম্ভব সাহায্য করেন আমায়।’ জানালেন, উচ্চ মাধ্যমিকের পর কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে।
লতিকার ছেলে সৌরভ উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। তার কথায়, ‘মায়ের নিজের উৎসাহ ছিল। অন্যদের থেকে উৎসাহ পেয়েছেন। ফের আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন, এটা একটা বড় ব্যাপার। মায়ের সঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ভালই লাগছে।’
/এএল