প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩, ১০:৩৩ পিএম
তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পের সময় সীমা এক সপ্তাহ পার হতে চলল। ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে যারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একে বারেই নেই বললে চলে। কিন্তু এতো হতাশার মাঝেও এসেছে ‘অলৌকিকভাবে’ জীবিত উদ্ধারের নানা গল্প। এটি এমনই এক গল্প।
গত ২৭ জানুয়ারি নেকলা কামুজ তার দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম দেন, নাম রাখেন ইয়াগিজ, যার অর্থ "সাহসী"। নেকলা এবং তার পরিবার তুরস্কের হাতায় প্রদেশে সামান্দাগ শহরে একটি আধুনিক পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকতেন। ঠিক ১০ দিন পরে, স্থানীয় সময় ৪.১৭ মিনিটে নেকলা তার ছেলেকে বাড়ির ভেতরে খাওয়াচ্ছিলেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যান।
তিনি বলেন, যখন ভূমিকম্প শুরু হয়েছিল, আমি আমার স্বামীর কাছে যেতে চেয়েছিলাম যিনি অন্য ঘরে ছিলেন এবং তিনিও সেটাই চেয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি আমাদের অন্য ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে আসার চেষ্টা করেছিলেন, তখন ওয়ারড্রবটি তাদের উপর আছড়ে পড়ে। তখন তাদের পক্ষে নড়াচড়া করা অসম্ভব ছিল।
অতঃপর উদ্ধার...
মাটির নিচে ৯০ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে, নেকলা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনতে পান। তিনি ভাবেন যে স্বপ্ন দেখছেন কিনা।
কুকুরের শব্দের সঙ্গে মানুষের শব্দও তিনি শুনতে পান। উদ্ধারকারীরা খুব সাবধানে তার সন্ধানে ধ্বংসস্তূপ খনন করতে শুরু করেন। তিনি তখনও ইয়াগিজকে ধরেছিলেন।
হঠাৎ তার চোখের ওপর টর্চের আলো জ্বলে উঠলে অন্ধকার কেটে যায়।
ইস্তাম্বুল মিউনিসিপালিটির ফায়ার ডিপার্টমেন্টের উদ্ধারকারী দল যখন জিজ্ঞাসা করে ইয়াগিজের বয়স কত, নেকলা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। তিনি কেবল জানতেন যে ভূমিকম্পের সময় তার বয়স ছিল ১০ দিন।
ইয়াগিজকে উদ্ধারকারীদের কাছে হস্তান্তর করার পর, নেকলাকে তখন একটি স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তার সামনে ছিল বিশাল জনতার ভিড়। তিনি কোনও মুখই চিনতে পারেননি। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি নিশ্চিত হন যে তার অন্য ছেলেকেও উদ্ধার করা হয়েছে।
ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে...
যখন তিনি হাসপাতালে পৌঁছান, নেকলাকে পরিবারের অন্য সদস্যরা অভ্যর্থনা জানান। তারা জানান যে তার ছয় বছর ধরে বিবাহিত স্বামী ইরফান এবং তার তিন বছর বয়সী ছেলে ইগিট কেরিমকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
কিন্তু তাদের পায়ে ও পায়ের পাতায় গুরুতর জখম থাকায় কয়েক ঘণ্টা দূরে আদানা প্রদেশের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নেকলা এবং ইয়াগিজ কোনও গুরুতর শারীরিক আঘাত পাননি। হাসপাতাল থেকে খালাস দেয়ার আগে তাদেরকে হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা কেবল পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছিল।
নেকলার ওই মুহূর্তে ফিরে যাওয়ার মতো কোনও জায়গা ছিল না, কিন্তু পরিবারের একজন সদস্য তাকে কাঠ এবং টারপলিন দিয়ে তৈরি একটি অস্থায়ী নীল তাঁবুতে নিয়ে যান।
তিনি বলেছেন, তার জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি ইয়াগিজের কাছে ঋণী। কারণ আমি মনে করি, যদি আমার শিশু এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী না হতো, তাহলে আমিও এতো শক্তি পেতাম না।
আরিয়ানএস/