• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ধ্বংসস্তূপে জন্ম নেয়া শিশুটিকে দত্তক নিতে চান হাজারো মানুষ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩, ১০:১৭ পিএম

ধ্বংসস্তূপে জন্ম নেয়া শিশুটিকে দত্তক নিতে চান হাজারো মানুষ

হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে নবজাতক ‘আয়া’র। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মা-বাবা এবং চার ভাই-বোন মারা গেছেন। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবনের নিচ থেকে উদ্ধার হয়েছে কেবল নবজাতক ‘আয়া’। 
তুরস্ক-সিরিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপে জন্ম নেয়া মেয়ে শিশুটিকে দত্তক নিতে চান হাজারো মানুষ। ‘আয়া’ নামে শিশুটি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, ওই হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের কাছে অসংখ্য ফোনকল যাচ্ছে মেয়েটিকে দত্তক নেয়ার জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজারো মানুষ শিশুটির হাসপাতালে যোগাযোগের উপায় খুঁজছে। যদিও এখনই আয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতার অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমের জেন্দেরেস শহরে একজন লোক একটি বিধ্বস্ত ভবনের নিচ থেকে বেরিয়ে আসছেন। তার হাতে দেখা যায় ধুলোয় মলিন এক নবজাতককে। পরে খলিল আল-সুয়াদী নামে এক দূরাত্মীয় ওই শিশুটিকে নিকটস্থ আফরিন শহরের হাসপাতালে নিয়ে যান।


শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, ভূমিকম্পে শিশুটির বাবা, মা এবং চার ভাই-বোন মারা গেছেন। কেবল সে বেঁচে গেছে। তাকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখনও মায়ের সঙ্গে তার নাড়ি যুক্ত ছিল। এমন অলৌকিকভাবে দুনিয়ায় আসার কারণে তার নাম দেয়া হয় ‘আয়া’।
হাসপাতালে আয়ার দেখাশোনা করছেন হানি মারুফ নামে এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। ওই চিকিৎসক জানান, আয়ার পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল।
তাকে উদ্ধারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে মন্তব্যের ঘরে হাজারো মানুষ আয়াকে দত্তক নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কেবল সিরিয়াই নয়, পার্শ্ববর্তী তুরস্ক এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষও আয়াকে দত্তক নিতে চাইছে। তাকে পাওয়ার জন্য যোগাযোগের উপায়ও জানতে চাইছেন অনেকে।
এর মধ্যে একজন লিখেছেন, ‘আমি শিশুটিকে দত্তক নিতে চাই এবং গোছানো জীবন উপহার দিতে চাই।’
একজন কুয়েতি টিভি উপস্থাপক লিখেছেন, ‘আমি এই শিশুটিকে লালন-পালন করতে দত্তক নিতে চাই...যদি আইনি প্রক্রিয়ায় সে সুযোগ পাই’।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক খালিদ আত্তিয়া জানান, আয়াকে দত্তক নেয়ার আগ্রহ দেখিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার কাছে অনেক ফোনকল আসছে।
আয়ার চেয়ে চার মাসের বড় এক কন্যা সন্তান তারও আছে জানিয়ে চিকিৎসক খালিদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে তাকে কাউকে দত্তক দেব না। তার আত্মীয় কেউ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এখন আমার সন্তানের মতোই তাকে চিকিৎসা করছি। আমার কন্যার মতোই আয়াকেও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে স্ত্রী।’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে তুরস্কের মধ্য-দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গাজিয়ানতেপের শহর নুরদায়ির ২৬ কিলোমিটার পূর্বে একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্পটি যখন আঘাত হানে তখন বেশির ভাগ মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। এই ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতার মধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হনে। এতে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ে তুরস্কে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে পাশের দেশ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলকেও।
সবশেষ খবর পর্যন্ত, ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তুরস্কে মৃত্যু হয়েছে ১৭ হাজার ৬৭৪ জনের এবং সিরিয়ায় প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৩৭৭ জনের।

 

আরিয়ানএস/

আর্কাইভ