• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের হামলায় অগ্নিগর্ভের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০৫:৫৯ পিএম

ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের হামলায় অগ্নিগর্ভের সম্ভাবনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অধিকৃত পশ্চিম তীরে জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের এবারের হামলার ঘটনাটি প্রায় দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণঘাতী হামলা। ইসরায়েলি সেনারা একটি ভবনে গুলি, গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ব্যবহার করে অভিযান চালানোর ঘটনায় ৯ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের সেনারা একজন ইসলামি জিহাদি জঙ্গিদের ধরতে গিয়েছিল, যারা বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছিল। তবে এখানে ঐতিহাসিক কিছু বিষয় রয়েছে। গত বছর পর্যন্ত সেখানে ইসরায়েলের অভিযান বাড়ছিল এবং নতুন প্রজন্মের সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে প্রায়ই তাদের সংঘর্ষ হচ্ছিল।
অনেকেই ২০০২ সালের এপ্রিলের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে এটি দ্বিতীয় ‍‍‘ইন্তিফাদা‍‍’ বা ফিলিস্তিনি আন্দোলন হিসেবে বর্ণনা করছিল। ওই সময় ইসরায়েল একটি পূর্ণ সামরিক অভিযান চালিয়েছিল যা জেনিনের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। ওই সময় অন্তত ৫২ জন ফিলিস্তিনি আর ২৩ জন ইসরায়েলি সেনা মারা গিয়েছিল।
এর জের ধরে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলে অনেকবার আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছিল। জেনিন শিবিরের বড় অংশই তখন ধ্বংসের মাত্রার দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে ফিলিস্তিনিরাও নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা শুরু করে। গত বসন্তে ইসরায়েল ‍‍‘ব্রেক দ্যা ওয়েভ‍‍’ নামে অপারেশন শুরু করে। অনেকেই ২০০২ সালের এপ্রিলের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে এটি দ্বিতীয় ‍‍‘ইন্তিফাদা‍‍’ বা ফিলিস্তিনি আন্দোলন হিসেবে বর্ণনা করছিল।
এটি করা হয়েছিল ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনিদের বন্দুক ও ছুরি ব্যবহার করে হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায়। এর মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে কথিত ইসলামিক স্টেট সমর্থকরা। বেশ কিছু ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী মারাও যায়, যার মধ্যে রাদ হাজেমও ছিলেন, যিনি তেল আবিবের একটি বারে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
ফলে জেনিন আবারো আলোচনায় আসে। ইসরায়েলের তল্লাশি, গ্রেফতার ও অভিযান বেড়ে যায়। ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স জানিয়েছে, তারা আরও হামলা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে পুরো পশ্চিম তীরে মৃত্যুর ঘটনা আরও বেশি। গত বছর সেখানে অন্তত দেড়শ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। যাদের অনেকেই সামরিক গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়েছে। কেউ কেউ হয়তো পথচারীই ছিল। ইসরায়েলকে সব সময় জাতিসংঘ ও অন্য কিছু মানবাধিকার সংস্থা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য অভিযুক্ত করে আসছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সেখানকার শহরগুলোতে সীমিত শাসন রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে জেনিন ও নাবলুসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন এই কর্তৃপক্ষ নব্বইয়ে অসলো শান্তি প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
আব্বাসের দল ফাতাহ পার্টির প্রবল প্রতিপক্ষ হামাস। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এখন ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়টি সমন্বয় করছে যার অর্থ হলো- তারাই কিছু মিলিশিয়ার তথ্য আদান প্রদান করছে। যদিও প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলছেন, জেনিনে হামলার কারণে নিরাপত্তা সমন্বয় তারা বন্ধ করে দেবেন।
তবে ২০২১ সালেই জেনিন শরণার্থী শিবির ও নাবলুসে কর্তৃত্ব হারিয়েছে। মে মাসে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের লড়াইয়ের সময় থেকেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সেখানে অজনপ্রিয় হয়ে পড়ে। আবার ইসরায়েলের একটি জেল থেকে ৬ বন্দী টানেল খুড়ে বেরিয়ে গিয়ে পড়ে ধরা পড়েছিল। তারা সবাই জেনিনের।
মূলত জেনিন ও নাবলুসের নতুন প্রজন্মের যোদ্ধারা মাহমুদ আব্বাসের কর্তৃপক্ষকে প্রত্যাখ্যান করছে। তারা সশস্ত্র হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ হারাচ্ছে। তারা নিজেদের জেনিন ব্যাটালিয়ন বলছে আর নাবলুসে তাদের পরিচিতি লায়নস ডেন হিসেবে।
জর্ডান থেকে চোরাচালান হয়ে আসা কিন্তু ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স ঘাঁটি থেকে চুরি  বা বিক্রি হওয়া অস্ত্র তারা ব্যবহার করছে। আর এদের অনেকেই কম বয়সী যারা ২০০২ সালের ঘটনা মনেও করতে পারে না।
ইসরায়েলের সেনাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থা। এসব লোকেরা লড়াই করতে চায়। তারা প্রাণ দিতে আগ্রহী।


ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের ওপর হামলা প্রতিরোধ করছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ইসলামি জিহাদিদের টেরর স্কোয়াড ইসরায়েলে হামলা করতে চাইছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ইসরায়েল গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।

 

 

এনএমএম/এএল

আর্কাইভ