প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩, ০২:০৩ এএম
ভারতে সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার হয় যেসব নদী, তার মধ্যে গঙ্গা অন্যতম। শিল্প-কারখানার বর্জ্য, মানুষের ফেলে যাওয়া আবর্জনা থেকে শুরু করে নানা উৎসব-পার্বণে অতিমাত্রায় দূষিত হয় এ নদী। কিন্তু এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গঙ্গার জলেই দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ভাষ্যে, গঙ্গার জলে প্রচুর ব্যাক্টেরিওফাজ রয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
ব্যাক্টেরিওফাজ মূলত এক প্রকার ভাইরাস। এ ভাইরাসের বিশেষত্ব হলো, এরা ব্যাক্টেরিয়াকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে ফেলে। সব নদীর জলেই কমবেশি ব্যাক্টেরিওফাজ থাকে। কিন্তু গঙ্গার জলে বিদ্যমান ব্যাক্টেরিওফাজের পরিমাণ অন্যসব নদীর তুলনায় বেশি। তাই একদিকে গঙ্গা নদীকে ঘিরে অসংখ্য আচার-অনুষ্ঠানের চাপে নদীতে যেমন ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়; অন্যদিকে নদীতে বিদ্যমান ব্যাক্টেরিওফাজ নদীর জলে থাকা ব্যাক্টেরিয়াকে যথাসম্ভব ধ্বংস করে এক প্রকার ভারসাম্য তৈরি করে।
সম্প্রতি অন্য নদীগুলোর তুলনায় গঙ্গায় ব্যাক্টেরিওফাজ বেশি থাকার বৈজ্ঞানিক কারণ নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ভারতের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এনইইআরআই)। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র বিজ্ঞানী কৃষ্ণা খাইরনার সংবাদমাধ্যম ডেক্কান হেরাল্ডকে বলেন, "গঙ্গা নদীতে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান ব্যাক্টেরিওফাজ ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করতে অন্যসব নদীর ব্যাক্টেরিওফাজের তুলনায় অধিক মাত্রায় কার্যকরী। আমরা এখনো গঙ্গায় ভাইরাসটি কেন বেশি কার্যকরী তার নির্দিষ্ট কারণ জানি না। তবে রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা নদীটির পলিমাটি নিয়ে অধিকতর গবেষণা করছি।"
অন্যসব নদীতে ব্যাক্টেরিওফাজ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হলেও গঙ্গায় এ ভাইরাসটি খুবই নিরাপদে টিকে থাকতে পারে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী কৃষ্ণা খাইরনার বলেন, "গঙ্গা নদীর পলিমাটি ঠিক কী সরবরাহ করার মাধ্যমে ব্যাক্টেরিওফাজকে বছরের পর বছর নিরাপদ রাখে সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। যেহেতু নদীটি উত্তর কাশী থেকে শুরু করে বারাণসী হয়ে পাটনায় মতো ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত; তাই ভৌগলিকভাবে আলাদা এসব অঞ্চলের পলিমাটিতে বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য হয়তো থাকতে পারে।"
করোনা মহামারি শুরুর পূর্বে `ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা` প্রজেক্টের অংশ হিসেবে বিজ্ঞানী খাইরনার ও তার সহযোগী গবেষকরা গঙ্গা নদীর প্রায় ৩৮টি ভিন্ন জায়গা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তীতে এ নমুনাগুলো যমুনা ও নর্মদা নদীর জলের নমুনার সাথে তুলনা করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, গঙ্গার জলে প্রায় ১৪৩ ধরনের ব্যাক্টেরিওফাজ রয়েছে যা যমুনা ও নর্মদা নদীর তুলনার অনেক বেশি। দেড় শতাধিকের কাছাকাছি এই ব্যাক্টেরিওফাজই মূলত গঙ্গায় প্রতিনিয়ত ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
এনইইআরআই এর এই সিনিয়র বিজ্ঞানী খাইরনার বলেন, "গঙ্গা নদীর পলিমাটি ব্যাক্টেরিওফাজকে প্রায় তিন বছরের মত দীর্ঘ সময় ধরে রুম টেম্পারেচারে রাখে। যার ফলে একদিকে এ ভাইরাসগুলো দীর্ঘদিন টিকে থাকে ও ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। নদীর পলিমাটিগুলোর রাসায়নিক ধরন সূক্ষ্মভাবে গবেষণা করে খুব শীঘ্রই আমরা এ রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হবো।"