• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

যে কারণে ডিম পাড়া মুরগির পেছনে ছুটছে নিউজিল্যান্ড!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৩, ০২:৩৮ এএম

যে কারণে ডিম পাড়া মুরগির পেছনে ছুটছে নিউজিল্যান্ড!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাজারে ডিম নেই। খালি পরে আছে ঝুড়ি। ব্যাটারিচালিত খাঁচা বন্ধের পর থেকে নিউজল্যান্ডে দেখা দিয়েছে ডিমের হাহাকার। সংকট পড়েছে ডিম পাড়া মুরগির। 

মুরগি পালন ও নিজ উঠোনে পোলট্রি ফার্ম তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে দেশটির বাসিন্দারা। বাজারে কিংবা অনলাইনে খুঁজে বেড়াচ্ছে মুরগি আর ডিম। তবে বেশির ভাগই ছুটছেন ডিমপাড়া মুরগি কেনার পেছনে। গার্ডিয়ান।

ব্যাটারি খাঁচা মূলত ডিম পাড়া মুরগির জন্য ব্যবহার করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদনে বিশ্বজুড়ে এর জুড়ি নেই। তবে কিছু অসুবিধাও আছে এই খাঁচায়। এখানে থাকা মুরগি তার স্বাভাবিক জীবণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। ছোট্ট-বদ্ধ এ খাঁচায় থাকতে থাকতে শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিরূপ প্রভাবও সৃষ্টি হয় মুরগির। এ ধরনের খাঁচা পাখিদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হিসাবে বিবেচিত। যার কারণে চলতি বছরের প্রথম দিনেই দেশটিতে এসব খাঁচা বেআইনি ঘোষণা করা হয়। 
অবশ্য ২০১২ সালেই এ খাঁচা নিষিদ্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তখন ৮৬ শতাংশ মুরগিই ব্যাটারিচালিত ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই সংখ্যাটি ১০ শতাংশে নেমে আসে। বছরের শুরুতে এ খাঁচা নিষিদ্ধের পর ডিম ও ডিম পাড়া মুরগির সংখ্যা কমে যায়। সাথে সাথে মানুষের ঝোঁক বাড়ে প্রতিপালনে।

পরিবাশবাদী সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছেন। বলেছেন, মুরগি কেবল ডিম পাড়ার মেশিন নয়। অকারণে ডিমের জন্য প্রাণীর সংকট তৈরি করবেন না। প্রাণীকল্যাণ বিষয়ক আইনজীবীরা ইতোমধ্যেই মুরগি কেনার জন্য দৌড়াদৌড়ি করে দেশব্যাপী ডিমের সংকট আরও না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছেন। 

ব্যাটারি খাঁচায় নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় সপ্তাহের মাথায় অনেক সুপারমার্কেটের তাক খালি পড়ে আছে। নিউজিল্যান্ডের পশু দাতব্য সংস্থা রয়েল নিউজিল্যান্ড সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলিটি টু এনিমেল (এসপিসিএ) পোলট্রি-উৎসাহীদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন। 

প্রধান নির্বাহী গ্যাবি ক্লেজি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি এটি আপনাদের একটি ভালো বুদ্ধি। তবে দীর্ঘমেয়াদি দেখাশোনা করতে না পারলে দয়া করে মুরগি পালতে যাবেন না। আমরা কেউই আর প্রাণীগুলোকে পরিত্যক্ত দেখতে চাই না।’ তিনি বলেন, ‘যারা মুরগি পালনে আগ্রহী তারা জানলে অবাক হবে যে, পাখিরা এক দশক বা তার বেশি সময় বাঁচতে পারে। তার মধ্যে প্রথম দুই বা তিন বছরে ডিম দিয়ে থাকে। কয়েক মাস তার ডিম পরা থেকে বিরতও থাকে। তারা মজাদার প্রাণী। তাদের দয়া করে ডিম উৎপাদনের মেশিন হিসাবে কিনবেন না।’ 

এসপিসিএ জানায়, যারা মুরগি পালন করার কথা ভাবছেন তারা কমপক্ষে তিনটি করে কিনুন। এরা সামাজিক প্রাণী এবং একত্রে থাকতে ভালোবাসে। সাথে অবশ্যই একটি পরিষ্কার খাঁচা, পর্যাপ্ত জায়গা, পশুচিকিৎসা, যত্ন, ভালো মানের খাবার এবং জল সরবরাহ নিশ্চিত করুন। মালিকদের স্থানীয় কাউন্সিলের নিয়ম এবং মুরগি পালনের অনুমতিগুলো মেনে চলতে হবে।

ডিম উৎপাদনকারীরা জানান, বাজারের চাহিদা মেটাতে তাদের কয়েক হাজার মুরগির অভাব রয়েছে। তাই ডিম সংকট মোকাবিলায় কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।

সুপারমার্কেটগুলোতে ক্রয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই তাই নিজ উঠানে মুরগি পালনের আশা করছেন। ট্রেড মি মুখপাত্র জেমস রায়ান বলেন, দেশটিতে মুরগি এবং ‘মুরগি-সম্পর্কিত আইটেমের’ বৃহত্তম অনলাইন শপের সাইটে অনুসন্ধান আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সাত দিনে ৭৭ শতাংশ বেড়ে ৩২ হাজার ৮০০ তে পৌঁছেছে।

প্রাথমিক শিল্প মন্ত্রণালয় অনুসারে, ডিম উৎপাদনের জন্য নিউজিল্যান্ডে ৩.৯ মিলিয়ন মুরগি রয়েছে। ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়া বছরের জন্য রপ্তানি মূল্য ছিল প্রায় ১৮ নিউজিল্যান্ড ডলার। ডিমের খুচরা বিক্রয় ছিল ২৮৬ নিউজিল্যান্ড ডলারের উপরে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ