প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩, ০২:৪৫ এএম
গিনেস বুক অব রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা জীবিত মানুষ হলেন তুরস্কের ৪০ বছর বয়স্ক সুলতান কোসেন যার উচ্চতা ৮ ফুট ২.৮ ইঞ্চি।
তবে কোসেনের উচ্চতা ছাড়িয়ে গেছেন ঘানার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা সুলেমানা আবদুল সামেদ। সম্প্রতি তিনি স্থানীয় হাসপাতালে চেকআপ করতে গেলে জানতে পারেন তার উচ্চতা ৯ ফুট ৬ ইঞ্চি বা ২.৮৯ মিটার।
এর ফলে বর্তমান রেকর্ডের সাথে মিলিয়ে দেখলে তিনিই হচ্ছেন বিশ্বের দীর্ঘতম মানব। তবে গিনেস বুক তাকে এখনও সবচেয়ে লম্বা মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
সুলেমানা আবদুল সামেদ – যার ডাকনাম আউচে - একটি বিরল স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত যার নাম জাইগ্যান্টিজম। বেশ কয়েক বছর আগে তার এ রোগ ধরা পড়ে এবং প্রতি মাসেই তাকে হাসপাতালে যেতে হয়।
দুঃখের বিষয় হলো গ্রামের ওই ক্লিনিকের নার্সরা তার উচ্চতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নন। কারণ সামেদকে নির্ভুলভাবে মাপার উপযুক্ত যন্ত্র সেখানে নেই। এজন্য তাকে মাপার মেশিনের সাথে বাড়তি একটি কাঠি লাগিয়ে এবং ১৬ ফিট লম্বা টেপ দিয়ে কয়েকজনে মিলে তার উচ্চতা মাপে। আর এভাবেই তারা বের করেন যে সামেদের উচ্চতা এখন সাড়ে নয় ফিট।
আউচের বয়স যখন ২২ বছর তখন তিনি রাজধানী আক্রায় থাকতেন। তিনি কাজ করতেন এক কসাইয়ের দোকানে, আর সেই বেতনের টাকা জমাচ্ছিলেন গাড়ি চালানো শেখার জন্য।
সেখানেই তিনি একদিন সকালে অনুভব করেন যে তার মুখের ভেতরে জিহ্বা এত বড় হয়ে গেছে যে তিনি ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছেন না। কয়েকদিন পরই তিনি টের পেলেন যে তার শরীরের অন্যান্য অংশও বড় হয়ে যাচ্ছে।
তার আত্মীয় স্বজনরা তাকে দেখে তার উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করতে লাগলেন। এর ফলে অন্য আরো সমস্যা দেখা দিতে লাগলো। তার মেরুদণ্ড অস্বাভাবিক বাঁকা হয়ে গেল। সামেদ বুঝতে পারলেন যে তিনি এক দানবাকৃতির মানুষে পরিণত হচ্ছেন।
সামেদ যে সমস্যায় আক্রান্ত তার নাম মারফান সিনড্রোম। এটি এমন একটি জিনগত সমস্যা যাতে দেহের সংযোগকারী কোষগুলো আক্রান্ত হয় এবং তার ফলে মানুষের হাত-পা অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে যায়। এতে হৃদপিণ্ডের ত্রুটির মত গুরুতর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
ডাক্তাররা বলছেন, সামেদের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থামাতে হলে তার মস্তিষ্কে একটি অস্ত্রোপচার করতে হবে।
আউচে এখন আক্রা ছেড়ে তার গ্রামে ফিরে গেছেন। তার গাড়ি চালক হবার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি তার ভাইয়ের সাথে মিলে একটি ছোট ব্যবসা করছেন। তার সামাজিক জীবনও সংকুচিত হয়ে গেছে।
তবে তার গ্রামে তিনি একজন সেলিব্রিটিতে পরিণত হয়েছেন। পথ চলতে তাকে নিয়মিত লোকের ডাকে হাসিমুখে সাড়া দিতে হয়। অনেকে তার সাথে সেলফি তোলেন।
তিনি বলছেন, তিনি চান বিয়ে করতে এবং সন্তানের বাবা হতে কিন্তু তার আগে এই স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানই এখন তার অগ্রাধিকার।
তার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে তার পায়ে, গোড়ালি এবং পায়ের পাতায় যে সমস্যা হয়েছে তা সারাতে প্লাস্টিক সার্জারির জন্য অর্থ তোলা। তবে এ সমস্যার জন্য সুলেমানা আবদুল সামেদ ভেঙে পড়েননি।