• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গুজব উড়িয়ে প্রকাশ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২, ০৫:৪১ পিএম

গুজব উড়িয়ে প্রকাশ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইন্টারনেটে গুজব ছড়িয়েছে যে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। চীনা অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী বলেছেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সিনিয়র নেতারা পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) প্রধানের পদ থেকে শি জিনপিংকে সরিয়ে দিয়েছেন। এরপর তাকে গৃহবন্দীও করা হয়েছে। তবে সব গুজব উড়িয়ে দিয়ে প্রকাশ্যে এলেন শি জিনপিং।

গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে উজবেকিস্তানে একটি শীর্ষ সম্মেলন থেকে চীনে ফেরার পর প্রথম জনসাধারণের মাঝে উপস্থিতি হয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানী বেইজিংয়ে একটি প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন তিনি। কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানায়।

উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত সম্মেলন থেকে দেশে ফেরার পর জনসমক্ষে আসেননি চীনের প্রেসিডেন্ট। এতে বেইজিংয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের অসমর্থিত গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

গত রবিবার ২ হাজার ৩০০ সদস্যের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধিদের নাম ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। তালিকায় সির নাম থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেইজিংয়ের সামরিক অভ্যুত্থানের গুজব আরেক দফা নাকচ হয়ে যায়। সূত্রবিহীন সামরিক যানের ভিডিও ও উড়োজাহাজের যাত্রা বাতিলের কথা বলে এ গুজব ছড়ানো হয়।

এমনকি দেশটির রাজধানী বেইজিংও এখন সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে অনেক চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী দাবি করেছেন। নিউজ হাইল্যান্ড ভিশন নামের একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনাতাও, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির স্টান্ডিং কমিটির সাবেক সদস্য সং পিংকে প্ররোচনা দিয়েছেন এবং তিনি দেশটির সেন্ট্রাল গার্ড ব্যুরোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।

তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে গ্রেফতার কিংবা গৃহবন্দী করে রাখার এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট ও স্বল্প পরিচিত অনেক অনলাইন সংবাদমাধ্যমের এই খবরকে ‘গুজব’ বলে মনে হচ্ছে।

পতনোন্মুখ অর্থনীতি, করোনাভাইরাস মহামারি এবং বিরল বিক্ষোভের পাশাপাশি তাইওয়ান ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে তিক্ততা সত্ত্বেও তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন সি। আসছে বছরগুলোয় ‘চীনা জাতির পুনরুজ্জীবনের জন্য’ নিজের মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নে ক্ষমতায় থাকতে চান তিনি।

এক দশক আগে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর সি অবিচলভাবে ক্ষমতা পোক্ত করেছেন এবং ভিন্নমত ও বিরোধিতার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থায় বিকল্প নেতা হিসেবে চীন বৈশ্বিক মঞ্চে নিজের অবস্থান অনেক বেশি পোক্ত করেছে।

সি ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার বিধিনিষেধ তুলে দেন। তখনই বিষয়টি ঠিক হয়ে যায় যে তিনি তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছর কিংবা আরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে যাচ্ছেন।

সির দশকব্যাপী শাসনে দলের মধ্যেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানো হয়; যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমাতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাঁর আমলে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন গুঁড়িয়ে দিতে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে শহরগুলোয় কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে নিপীড়নমূলক নীতির জন্যও মানবাধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্রভাবে সমালোচিত সি। সেখানকার প্রায় ১০ লাখ উইঘুরসহ অন্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের কথিত সন্ত্রাসবাদ দমনের কথা বলে আটকে রাখা হয়েছে।

আগামী ১৬ অক্টোবর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পঞ্চবার্ষিক সম্মেলন। এই সভায় তিনি তৃতীয় মেয়াদে দলের নেতৃত্বে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন বলেই ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় চলছে।

শির শাসনামলে দলের মধ্যেই দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করে যাচ্ছেন। জননিরাপত্তাবিষয়ক সাবেক ভাইস মিনিস্টার সান লিজুন, সাবেক বিচারমন্ত্রী ফু ঝেংহুয়া এবং সাংহাইয়ের সাবেক দুই পুলিশপ্রধান চোংকিং ও শানজিকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের এই গ্রেপ্তারের ঘটনা চীনে গত কয়েক বছরে মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দমন অভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমাতে এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তার আমলে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন গুঁড়িয়ে দিতে একের পর এক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল।

এছাড়াও, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে নিপীড়নমূলক নীতির জন্যও মানবাধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্রভাবে সমালোচিত শি। সেখানকার প্রায় ১০ লাখ উইঘুরসহ অন্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের কথিত সন্ত্রাসবাদ দমনের কথা বলে আটকে রাখা হয়েছে।

জেডআই/

আর্কাইভ