• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পুতিনের সেনা সমাবেশের ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন দেশের নেতারা যা বললেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২, ০৮:০৬ এএম

পুতিনের সেনা সমাবেশের ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন দেশের নেতারা যা বললেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

‘মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য’ সেনা সমাবেশের নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম এ ধরনের সেনা সমাবেশ করতে যাচ্ছে রাশিয়া। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে তিনি এ নির্দেশ দেন।

পুতিন বলেন, ‘পশ্চিমারা পারমাণবিক অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছে। এর জবাব দেয়ার জন্য মস্কোর হাতে প্রচুর অস্ত্রের মজুত রয়েছে।’

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু জানিয়েছেন, পুতিনের এই আদেশের ফলে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ভূমিকা রাখার জন্য বাড়তি তিন লাখ সেনাকে ডাকা হবে। অতীত সামরিক অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের এখানে ডাকা হবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ঘোষণা ইউক্রেন সংঘাত আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুতিনের সেনা সমাবেশের এমন ঘোষণার পর ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না তিনি (পুতিন) এ সব অস্ত্র ব্যবহার করবেন। বিশ্ব তাকে এ সব অস্ত্র ব্যবহার করার সুযোগ দেবে বলেও আমার মনে হয় না। পুতিন আগামীকাল বলতে পারেন, ‘ইউক্রেন ছাড়া আমরা পোল্যান্ডের একটা অংশ চাই, না হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করব।’ আমরা এসব মানতে পারি না।’

জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়ার ক্রমাগত ব্যর্থতার মুখে পুতিন সেনা সমাবেশের এ ঘোষণা দিয়েছেন। কেননা পুতিন এখন দেখছেন তার সেনারা সোজা পালিয়ে যাচ্ছে। তাই তো এখন তিনি তার দেশের সেনাদের রক্তসহ সারা ইউক্রেনকে রক্তে ডুবিয়ে দিতে চান।’

ন্যাটোর প্রধান ইয়েনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘পুতিনের সেনা সমাবেশের ঘোষণা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে একটি ‘বিপজ্জনক ও বেপরোয়া’ পদক্ষেপ। আরও সেনা সমাবেশ ঘটালে ইউক্রেনে চলমান সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়বে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের গুরুতর পরিণতি নিয়ে মস্কোর যেন কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়, সেটা নিশ্চিত করবে ন্যাটো।’    

তিনি আরও বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করলে আমরা কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাব, সে বিষয়ে মস্কোর যাতে কোনো ভুল ধারণা না থাকে, সেটা আমরা নিশ্চিত করব। তবে এটা নির্ভর করবে রাশিয়া কোন ধরনের পরিস্থিতিতে কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করবে, তার ওপর।’    

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জিলিয়ান কিগান বলেছেন, ‘পুতিনের এই ভাষণ ইউক্রেনের যুদ্ধে সহিংসতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত। তার এই হুমকি অবশ্যই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।’

কিগান আরও বলেন, ‘স্পষ্টতই এটা এমন একটা বিষয়, যেটা আমাদের অনেক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। কারণ আপনি জানেন, আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। আসলে পুতিন নিজেও স্বাভাবিক আছেন কি না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। এটা অবশ্যই পরিস্থিতি আরও গুরুতর হওয়ার ইঙ্গিত।’

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট তার নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতি ভেঙেছেন। কোনো হুমকি বা প্রচারণা এই সত্য লুকাতে পারবে না যে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পথে ইউক্রেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ। রাশিয়া দিনের পর দিন একটা বিচ্ছিন্ন দেশ হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে।’  

যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিনের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এই হুমকি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।’

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র আছে, এমন দেশের জন্য এটা দায়িত্বজ্ঞানহীন একটা বক্তব্য। তবে সাত মাস ধরে তিনি যেভাবে কথা বলে আসছেন, তাতে সেনা সমাবেশ করার ঘোষণা অস্বাভাবিক নয় এবং আমরা এটাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছি।’

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে রাশিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগারে হাত দিলে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এর জবাব দেবে। বাইডেন বলেছিলেন, ‘এর পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ। শুধু তিনি (পুতিন) বিশ্বমঞ্চে একঘরে হয়ে পড়বেন না, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এর কঠিন জবাব দেবে। যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হেবেক বলেছেন, ‘রাশিয়ার দিক থেকে এটা আরও একটি খারাপ ও ভুল পদক্ষেপ। কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানানো যায় কিংবা মোকাবিলা করা যায়, আমরা অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’

ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) একজন নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পুতিনের আংশিক সেনা সমাবেশ করার এই ঘোষণা প্রমাণ করে যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এখন বেপরোয়া ও উন্মাদ হয়ে উঠেছেন। এই সংকট কীভাবে আরও ঘনীভূত করা যায় তিনি সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন।’

ইউরোপীয় কমিশনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিভাগের মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পুতিন যে শান্তিতে বিশ্বাসী নন, এটা তার আরও একটি উদাহরণ। আগ্রাসনের এই যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ুক, সে বিষয়ে তিনি বেশি আগ্রহী।’

পুতিনের এমন ঘোষণার পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়গুলো সমাধানের একটি পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বুধবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘ইউক্রেন ইস্যুতে চীন আগের অবস্থানে আছে এবং এই অবস্থান স্পষ্ট।’

জেইউ

আর্কাইভ